No Result
View All Result
  • Login
  • Register
Al Azhar blog
  • প্রচ্ছদ
  • তত্ত্ব ও সমাজ
  • বই আলোচনা
  • ইতিহাস
  • ফিকহ
  • আকিদাহ
  • তুরাস
  • চিন্তাধারা
  • সাহিত্য
  • সকল ক্যাটাগরি
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • সভ্যতা সংস্কৃতি
    • শিল্পকলা
    • জীবনদর্শন
    • ব্যক্তিত্ব
    • নারী
    • ক্যারিয়ার
    • তথ্য প্রযুক্তি
    • আঙিনা
    • প্রবাস জীবন
    • এন্টারটেইনমেন্ট
আপনিও লিখুন
যারা লিখছেন
Al Azhar blog
  • প্রচ্ছদ
  • তত্ত্ব ও সমাজ
  • বই আলোচনা
  • ইতিহাস
  • ফিকহ
  • আকিদাহ
  • তুরাস
  • চিন্তাধারা
  • সাহিত্য
  • সকল ক্যাটাগরি
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • সভ্যতা সংস্কৃতি
    • শিল্পকলা
    • জীবনদর্শন
    • ব্যক্তিত্ব
    • নারী
    • ক্যারিয়ার
    • তথ্য প্রযুক্তি
    • আঙিনা
    • প্রবাস জীবন
    • এন্টারটেইনমেন্ট
No Result
View All Result
Al Azhar blog
No Result
View All Result

ইন্দো-মুসলিম সভ্যতার গোড়াপত্তনের ইতিকথা

ড. আ ফম খালিদ হোসেন by ড. আ ফম খালিদ হোসেন
নভেম্বর ১, ২০২৩
0
0
ইন্দো-মুসলিম সভ্যতার গোড়াপত্তনের ইতিকথা

উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদের রাজত্বকালে মুহাম্মদ বিন কাসিমের ভারতবর্ষে আগমন ইতিহাসে এক তাৎপর্যমন্ডিত ঘটনা। এর ফলাফল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। তিন বছরের মধ্যে বিন কাসিম সিন্ধু ও মুলতানে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে এক নব অধ্যায়ের সূচনা করেন। ভারতীয় জনগণের অনৈক্য, সিন্ধুর রাজা দাহিরের স্বৈরশাসন, নৌশক্তির অভাব এবং বিক্ষুব্ধ জাঠ, মেড, বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সহযোগিতা আরবদের সফলতার প্রধান কারণ। এ ছাড়া ইসলাম প্রচার ও দুঃসাহসিক চেতনা মুসলমানদেরকে সিন্ধু বিজয়ে যথেষ্ট সাহস জোগায়। তরুণ মুহাম্মদ বিন কাসিম যেসব এলাকা জয় করেন সর্বত্র বিজিত লোকদের প্রতি ন্যায় ও সহনশীলতার পরিচয় দেন। তিনি সেখানে দেবলনগরে প্রবেশের পর শুধু অযথা রক্তপাতেই বাধা প্রধান করেননি; অধিবাসীদের প্রতি তিনি সৌজন্য ও উদারতামূলক আচরণ করেছিলেন। হিন্দুরা তাদের পূর্ববর্তী পদে বহাল থাকে, শুধু শাসনব্যবস্থা হিন্দুদের হাত থেকে মুসলমানদের হাতে স্থানান্তরিত হয়। অমুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়া হলো। সিন্ধুবাসীর আবেদনের পরিপেক্ষিতে মন্দির মেরামতের অনুমতি দেয়া এবং যুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা হয়। ব্রাহ্মণাবাদ, আরোর, রাওয়ার, মুলতান এবং অন্যান্য স্থানেও একই ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অমুসলিমদের ওপর জিজিয়া ছাড়া অন্য কোনো নতুন কর ধার্য করা হয়নি। যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, তাদেরকে ‘জিজিয়া’ কর থেকে মুক্তি দেয়া হয়।

মুহাম্মাদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় রাজনৈতিক ফলাফল বিবেচনায় ইতিহাসবিদদের মধ্যে ভিন্ন মত থাকলেও আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় তাৎপর্য নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। ইতিহাসবিদ ড. ঈশ্বরী প্রসাদের মতে আরবদের সিন্ধু বিজয় রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামের ইতিহাসে ‘একটি অকিঞ্চিৎকর ঘটনা’ (ওহংরমহরভরপধহঃ বাবহঃ); স্ট্যানলি লেনপুলের মতে ‘একটি উপাখ্যান বিশেষ, একটি নিষ্ফল বিজয়’ (অহ বঢ়রংড়ফব, ধ ঃৎরঁসঢ়য রিঃযড়ঁঃ ৎবংঁষঃ)। একই ভাবধারায় ঐতিহাসিক এস আর শর্মা বলেন, ‘রাজকীয় আকাশের চক্রবালে অর্ধচন্দ্রটি সর্বোচ্চ স্থানে উদিত হইবার সৌভাগ্য লাভ করে, কিন্তু ইহা শুধু অর্ধচন্দ্র থাকিবার জন্যই, পূর্ণচন্দ্র নহে।’ তাদের মতে, মুহাম্মদ বিন কাসিমের আধিপত্য শুধু সিন্ধু ও মুলতানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এবং উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের বিশাল অঞ্চলের ওপর তিনি কোনো প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হননি। মুহাম্মাদ বিন কাসিমের আকস্মিক মৃত্যু, উমাইয়া খলিফা সুলায়মানের ক্ষমতায় আরোহণ, দামেশকের বিদেশনীতির পরিবর্তন, ভারতীয় রাজা, হিন্দু পুরোহিতরা ও সামস্ত বিশেষত রাজপুতদের প্রবল বিরোধিতার ফলে মুসলিম বিজয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ ছাড়া আরবরা সিন্ধু দেশে যেসব রাস্তাঘাট ও প্রাসাদ নির্মাণ করেন সেগুলোও স্বল্পকালের মধ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। খুব সম্ভবত এসব কারণে ইতিহাস গবেষকরা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে আরবদের সিন্ধু বিজয়কে ‘নিষ্ফল’ বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, সিন্ধু বিজয় পরবর্তীকালে ভারতে মুসলিম শাসনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। এটি ছিল মূলত অগ্রবর্তী অভিযান। স্বল্পতম সময়ে গোটা ভারত জয় করা অসম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ প্রক্রিয়া। মুহাম্মদ বিন কাসিমের পথ ধরে সুলতান মাহমুদ গজনবি, মুহাম্মদ ঘোরি ও বাবর অভিযান পরিচালনা করে ভারতের বুকে মুসলিম রাজত্বের ভিত্তি স্থাপনে সমর্থ হন। সুতরাং এই ঘটনাকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে ‘একটি অকিঞ্চিৎকর ঘটনা’ বা ‘একটি উপাখ্যান বিশেষ বা একটি নিষ্ফল বিজয়’ বলে উড়িয়ে দেয়া সমীচীন নয়।

ভারতীয় ইতিহাস গবেষক ড. কিরণচন্দ্র চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কিন্তু সামান্য অনুধাবন করিলে আমাদের বুঝিতে বিলম্ব হইবে না যে, আরবদের সিন্ধু অধিকারের সময় হইতে শুরু করিয়া আধুনিক যুগের পূর্বাবধি সিন্ধুর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা সামাজিক জীবন ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল। আরবদের শাসন স্থাপনের ফলে বহুসংখ্যক আরব বণিক পর্যটক, সন্ত, মনীষী সিন্ধুতে আসিয়াছেন এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিভ্রমণ করিয়া যেই সকল বর্ণনা রাখিয়া গিয়াছেন, সেইগুলি পরবর্তীকালে তুর্কিদিগকে ভারতবর্ষ অভিযানে উৎসাহিত করিয়াছে’ (ড. কিরণচন্দ্র চৌধুরী, ভারতের ইতিহাস কথা, পৃ. ৫৭৬)।

আরবদের সিন্ধু বিজয়ের পর থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিম প্রভাব দ্রæত বৃদ্ধি পেতে থাকে। দেবল, সোমনাথ, কাথিওয়াড়, কঙ্কন, ব্রোচ, ক্যাম্বে, সিন্দন, চেউল, গুজরাট প্রভৃতি স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুসলিম বসতি গড়ে ওঠে এবং প্রায় প্রাতিটি স্থানেই মসজিদ নির্মিত হয়। বেশির ভাগ হিন্দু শাসক তাদের রাজ্যে মুসলমানদের স্বাগত জানান। বসতি স্থাপনের পরপরই মুসলমানরা ধর্মপ্রচারে ব্রতী হন। কেননা ইসলাম অপরিহার্যভাবে একটি প্রচারব্রতী ধর্ম এবং প্রতিটি মুসলমানই আপন ধর্মের প্রচারকস্বরূপ। নব প্রতিষ্ঠিত ধর্মের উদ্দীপনা এবং বিজয়ের মর্যাদা ও গৌরব বহন করে এসব মুসলিম ভারতে আসেন। নবম শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই তারা ভারতের সমগ্র পশ্চিম উপক‚ল অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং ধর্মাচরণের বৈশিষ্ট্য, ধর্মপ্রচার ও পালনের উৎসাহ দ্বারা হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে গভীর সাড়া জাগাতে সক্ষম হন (ড. তারা চাঁদ, ভারতীয় সংস্কৃতিতে ইসলামের প্রভাব,পৃ. ২৭, ৩৬)।

দশম শতাব্দীতে পর্যটক ইবনে হাউকল সিন্ধু দেশ ভ্রমণ করতে এসে জনগণকে আরবি ও সিন্ধি দু’ভাষাতেই কথা বলতে শোনেন এবং মুসলিম ও হিন্দু জনতার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব লক্ষ করেন। এখনো সিন্ধি ভাষায় আরবি হরফ ব্যবহৃত হয় এবং এ ভাষায় আরবি ভাষার প্রভাব খুব বেশি। সিন্ধুর সমাজব্যবস্থাও অনেকটা আরব দেশের অনুকরণে গোত্রীয় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং আরবদের মতো সিন্ধিরাও অতিথিবৎসল। সিন্ধুতে মুসলিম শাসনামলের অনেক কীর্তি আজো বিদ্যমান রয়েছে। কাজেই রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে আরবদের সিন্ধু বিজয়ের গুরুত্ব একেবারেই খাটো করা যায় না। আরবদের সিন্ধু বিজয় শুধু কাহিনীস্বরূপ নয়, এর স্থায়ী ফল ও প্রভাব সুপ্রতিষ্ঠিত।

আগে থেকেই ভারতবর্ষে আরব বণিক ও পীর-দরবেশদের আনাগোনা থাকলেও ইবনে কাসিম কর্তৃক সিন্ধু বিজয়ের ফলে আলেম, ধর্মপ্রচারক, পীর, আউলিয়া ও দরবেশদের ভারতবর্ষে আগমন বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন স্থানে মসজিদ, খানকাহ ও মাদরাসা গড়ে ওঠে। ইসলামের দাওয়াত নিয়ে তারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে লাহোরের দাতা গঞ্জবখশ, পাঞ্জাবের সায়্যিদ জালালুদ্দিন সুরখেপাশ বুখারি, রাজস্থানের শায়খ হামিদুদ্দিন নাগুরি, মুলতানের শায়খ বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, পশ্চিম পাঞ্জাবের শায়খ ফরিদুদ্দিন গঞ্জশকর, দিল্লির হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া, আজমিরের খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি, দাক্ষিণাত্যের শায়খ কামালুদ্দিন চিশতি, পানিপথের বু’আলী শাহ কলন্দর, গুজরাটের শায়খ আবদুল ওয়াহাব শাযলি, কাশ্মিরের সায়্যিদ আলী হামাদানি, বিহারের শায়খ শারফুদ্দিন ইয়াহিয়া মানিরি, সিলেটের হজরত শাহজালাল, রাজশাহীর শাহ মাখদুম, চট্টগ্রামের শাহ আমানত, সোনারগাঁওয়ের শায়খ শারফুদ্দিন আবু তোয়ামা, বগুড়ার সাইয়্যেদ মাহমুদ মাহিসওয়ার এবং রংপুরের মাওলানা কারামাত আলী জৈনপুরীর নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ পীর-মাশায়েখদের অব্যাহত দাওয়াতি তৎপরতার ফলে ইসলামের সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, উদারতা ও পরমতসহিষ্ণুতার বাণী বর্ণভেদ ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। দলে দলে নির্যাতিত হিন্দুরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বহু রাজা-মহারাজা বিশেষত পাঞ্জাবের বেশ কয়েকটি রাজপুত পরিবার, মালবের রাজগড় রাজ্যের রাজা মুতি সিংহ ও পানিপথের অমর সিংহ রাজপুত এসব সুফির দাওয়াতি তৎপরতার ফলে ইসলাম কবুল করেন। কালক্রমে সিন্ধু এ উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান মুসলিম এলাকায় পরিণত হয়।

মুহাম্মদ বিন কাসিমের পর ১০০ হিজরিতে উমর ইবনে আবদুল আজিজ সিন্ধু অঞ্চলের সব রাজা ও ঠাকুরদের কাছে ইসলাম কবুল করার জন্য তাবলিগি পত্র প্রেরণ করেন। পত্র প্রাপ্তির পর রাজা দাহিরের দুই ছেলে জয় সিংহ ও চাচাসহ অধিকাংশ রাজা ও ঠাকুর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। উমর ইবনে আবদুল আজিজ জয় সিংহকে ব্রাহ্মণাবাদের প্রশাসক নিযুক্ত করেন। আব্বাসীয় খলিফা মাহদি ক্ষমতায় আরোহণের পর সিন্ধুর গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ আঞ্চলিক প্রশাসকদের কাছে ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে দাওয়াতিপত্র প্রেরণ করেন। শ্রী রায় ও মহারাজা নামে পরিচিত দু’জন শাসকসহ বহু মানুষ ইসলামে দীক্ষা লাভ করেছিলেন। সুতরাং ভারতীয় অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের বিকাশের ক্ষেত্রে এই বিজয়ের ফলাফল ছিল সুগভীর ও দূরপ্রসারী। ড. কিরণচন্দ্র চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সিন্ধু দেশে আরব অধিকার প্রতিষ্ঠিত হইবার এবং ভারতবর্ষে ইসলাম ধর্ম প্রচারের ফলে সমাজের অবহেলিত, জাতপাতের দরুন নীচ সম্প্রদায় বলিয়া হিন্দু সমাজে অপাঙক্তেয়, পতিত শ্রেণীর যাবতীয় লোকের মধ্যে ইসলাম ধর্মের প্রতি আগ্রহ দেখা দিলো। কারণ ইসলাম ধর্মে সকল লোকের সামাজিক সমতার নীতি স্বভাবতই তাহাদের মনে গভীর রেখাপাত করিল। এক ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ সমাজ, সকলের সমান সামাজিক মর্যাদার নীতি হিন্দু সমাজের অনেককে আকৃষ্ট করিয়া ইসলাম ধর্মকে ভারতবর্ষে স্থায়িত্ব দান করিয়াছিল’ (ড. কিরণচন্দ্র চৌধুরী, ভারতের ইতিহাস কথা, পৃ. ৫৭৭)।

এ প্রথম ভারতীয় উপমহাদেশের মাটিতে দু’টি বিপরীতমুখী সংস্কৃতি একে অপরের সংস্পর্শে আসে। দু’টি সংস্কৃতির সহাবস্থান একে অপরকে প্রভাবিত করে স্বাভাবিকভাবে। মুসলমানদের সংস্পর্শে এসে ভারতীয়রা জানতে পারল, মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ ইসলামে নেই; ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা এক কাতারে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহর ইবাদত করতে পারে; ধর্মগ্রন্থ পাঠে ধর্মগুরুও সাধারণ মুসলমানের অধিকার সমান। বিজেতা আরবরা এ দেশে ইসলামী সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার ফলে হিন্দুদের সনাতনী কৌলীন্যপ্রথা, পৌত্তলিকতা ও অস্পৃশ্যতার ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার বহু উপাদান যেগুলো আরবীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার ওপর প্রভাব ফেলেছিল, সেগুলো পরবর্তীকালে আরবদের মাধ্যমে ইউরোপে বিস্তার লাভ করে। হিন্দু ধর্ম, বেদান্দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা, আয়ুর্বেদশাস্ত্র, সঙ্গীত, গণিত, সাহিত্য, লোকগীতি, চিত্রকলা, স্থাপত্য, দাবা প্রভৃতি বিষয়ে আরবরা ভারতীয়দের কাছ থেকে প্রভ‚ত জ্ঞান লাভে সমর্থ হন (উৎ. ওংধিৎর চৎধংধফ, অ ঝযড়ৎঃ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ গঁংষরস জঁষব রহ ওহফরধ, ঢ়.৩৯)।

সিন্ধু অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের সুবিধার্থে মুসলমানরা স্থানীয় ভাষায় ধর্মীয় গ্রন্থাদি অনুবাদ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। আরোর-এর হিন্দু রাজা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গ্রন্থ অনুবাদের জন্য মানসুরা-এর স্থানীয় প্রশাসককে অনুরোধ করেন। তিনি কিছু বিজ্ঞ আলেমের মাধ্যমে পবিত্র কুরআনসহ ধর্মীয় গ্রন্থাদি সিন্ধি ভাষায় অনুবাদের ব্যবস্থা করেন। এসব অনুবাদকর্মে রাজা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং পরবর্তীতে ব্যাপক অধ্যয়নের পর ইসলামে দীক্ষিত হন (বুজুর্গ ইবনে শাহরে ইয়ার, আজাইবুল হিন্দ, পৃ. ৩; আবু যফর নদভী, তারিখে সিন্দ, পৃ. ৩৭০)। আব্বাসীয় খলিফা আল-মানসুর ও হারুনুর রশীদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ভারতীয় বৌদ্ধ। পরে অবশ্য তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। খলিফা আল-মানসুর (৭৫৪-৭৫ খ্রি:), খলিফা হারুনুর রশিদ (৭৮৬-৮০৯ খ্রি:) এবং খলিফা মামুনের (৮১৩-৮৩৩ খি:) শাসনামলে সংস্কৃত ভাষায় লিখিত ভারতীয় বহু গ্রন্থ আরবি ভাষায় অনূদিত হয়। হারুনুর রশিদ ভারতীয় পÐিত চানক্যের ‘অর্থশাস্ত্র’-এর একটি অংশ অনুবাদের ব্যবস্থা করেন। অনূদিত গ্রন্থের মধ্যে ব্রহ্মগুপ্ত রচিত ‘ব্রহ্মসিদ্ধান্ত’ এবং ‘খান্দক্যদাইকা’ গ্রন্থ দু’টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আব্বাসীয় খলিফারা ব্রহ্মগুপ্তসহ বেশ কয়জন ভারতীয় মনীষীকে তাদের দরবারে আমন্ত্রণ জানান। ১৫৬ হিজরিতে ‘ব্রহ্মসিদ্ধান্ত’ আরবিতে ভাষান্তর করেন আল ফাজারি ও ইয়াকুব ইবনে তারিখ (ইবনে নাদিম, আল-ফিহরিস্ত, পৃ. ৫৩০; মুফতি মুহাম্মদ মুশতাক তিজারভি, বাররে সাগির মে ইশা‘আতে ইসলাম কি তারিখ, পৃ. ১১০; ড. কিরণচন্দ্র চৌধুরী, ভারতের ইতিহাস কথা, পৃ. ৫৭৬-৫৭৭)।

আরবেরও বহু শিক্ষার্থী এ দেশে আগমন করে বিভিন্ন শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করেন। খলিফা মামুনের খিলাফতকালে মানকা ও দুবান নামক দু’জন প্রখ্যাত ভারতীয় পÐিত বাগদাদে গমন করে তথায় অনুবাদকর্মে নিয়োজিত থাকেন। অনুরূপভাবে বাগদাদের আবু মাশার ভারতের বারানসিতে ১০ বছর অবস্থান কওে জ্যোতির্বিদ্যায় শিক্ষা লাভ করেন। হিন্দু জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাথে মুসলিম মেধার সমন্বয় সাধন করে পরবর্তীকালে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আল বেরুনি ‘তাফহিম’ ও ‘কানুন আল মাসউদী’ গ্রন্থ রচনা করেন। আব্বাসীয় খলিফাদের উদ্যোগে বাগদাদে যে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানে ভারতীয় পÐিতবর্গ কর্তৃক প্রণীত ‘চরক’ ও ‘সুশ্রæত’ আরবি ভাষায় অনূদিত হয়।

আরবগণ ভারতীয় গণিতশাস্ত্রবিদদের কাছে ‘শূন্যের’ ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করেন। বিদপাই নামক ভারতীয় পÐিত বিষ্ণু শর্মা ‘পঞ্চতন্ত্র’ নামক যে পুস্তকটি রচনা করেন সেটাই পরবর্তীকালে খলিফা আল মানসুরের শাসনামলে ইবনে আল-মুকাফফা কর্তৃক অনূদিত হয়ে ‘কালিলা ওয়া দিমনা’ নামে অভিহিত হয় এবং আরবি সাহিত্য ও চিত্রশিল্পে এক বিরাট আলোড়নের সৃষ্টি করে। ইসলামের শৈশবকালে গ্রিসের কাছে নয়, বরং ভারতবর্ষ থেকে শিক্ষা-সভ্যতার নানা বিষয়ে জ্ঞানলাভ করেছে ইসলাম। স্থাপত্যবিদ্যা, সুকুমারশিল্প, শিল্পকলা, সঙ্গীতসহ বহু বিষয়ে আরবগণ ভারতীয়দের কাছে শিক্ষা লাভ করেন (ঐধাবষষ, অৎুধহ জঁষব রহ ওহফরধ, ঢ়. ২৫০)।

আরবদের সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের ফলে একদিকে ভারতবর্ষের সাথে বহির্বিশ্বের সামুদ্রিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়; অপর দিকে সিন্ধু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছু বাণিজ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এ দেশের সাথে আরবদের আগের বাণিজ্যিক আদান-প্রদান আরো অধিক জোরদার হয়ে উঠে। এ বিজয় আরবীয় মুসলমানদের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সামুদ্রিক বাণিজ্যের পথকে প্রসারিত ও সুগম করে তোলে। অষ্টম ও নবম শতাব্দীতে আরব বণিকরা সমুদ্র বাণিজ্যপথে সিন্ধু হয়ে বাংলার উপক‚লে পৌঁছেন। এ বিজয়ের ফলে ভারতীয়রাও আরবদের ধর্ম, মতবাদ, আদর্শ, আচার-অনুষ্ঠান প্রভৃতির সাথে পরিচিত হয়। আরবদের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নীতির ফলে এ দেশে ‘ভক্তি আন্দোলন’ এবং ‘ব্রাহ্মসমাজ’ গড়ে ওঠে। আরবরা শতধাবিভক্ত ভারতে একটি নতুন ধরনের শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। এক কথায়, সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের ফলেই ভারতে ইন্দো-মুসলিম সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়।
সিন্ধু বিজয়ের ফলে আরববাসী সর্বপ্রথম সামাজিকভাবে এ দেশীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের সংস্পর্শে আসেন। আরবদের মধ্যে অনেকেই সিন্ধু দেশে বসতি স্থাপন করে সিন্ধি মেয়েদের বিয়ে করেন। আরবদের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যের ফলে হিন্দুদের দৈনন্দিন সামাজিক জীবনে মুসলিম রীতিনীতির প্রবেশ ভারতে মুসলমানদের ভবিষ্যৎ অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করে। এভাবে আর্য ও সেমিটিক জাতির সংমিশ্রণে একটি নতুন জাতিসত্তার উদ্ভব ঘটে। প্রকৃতপক্ষে সেই জাতিই ভারতে পরে ইন্দো-সারাসেনিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে ইতিহাসে খ্যাতি অর্জন করে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক

আরও পড়ুন

আন্দালুস : আমাদের হারিয়ে যাওয়া ফিরদাউস

আন্দালুস : আমাদের হারিয়ে যাওয়া ফিরদাউস

নভেম্বর ১, ২০২৩
আরবরা ছিলো ইসলামের তরবারি, তুর্কিরা ইসলামের ঢাল

আরবরা ছিলো ইসলামের তরবারি, তুর্কিরা ইসলামের ঢাল

নভেম্বর ১, ২০২৩
পুণ্যভূমি ফিলিস্তিন : হাজার বছরের ইতিহাস

পুণ্যভূমি ফিলিস্তিন : হাজার বছরের ইতিহাস

নভেম্বর ১, ২০২৩
ShareSendShareSend
ড. আ ফম খালিদ হোসেন

ড. আ ফম খালিদ হোসেন

Next Post
আরবরা ছিলো ইসলামের তরবারি, তুর্কিরা ইসলামের ঢাল

আরবরা ছিলো ইসলামের তরবারি, তুর্কিরা ইসলামের ঢাল

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বাধিক পঠিত

  • সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহের কবিতা— আমি চাই না

    সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহের কবিতা— আমি চাই না

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • সহশিক্ষা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ: আল আযহার নিয়ে প্রচলিত মিথ ও বাস্তবতা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • ইতিহাসের জন্মভূমি: মিসরে ইসলামের সোনালী অতীত

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

সাম্প্রতিক রচনা

জায়নবাদী আগ্রাসন:  সুলতান আবদুল হামিদ যেভাবে রক্ষা করেছিলেন আল কুদসকে 

জায়নবাদী আগ্রাসন: সুলতান আবদুল হামিদ যেভাবে রক্ষা করেছিলেন আল কুদসকে 

নভেম্বর ২১, ২০২৩
কুরআনের দার্শনিক প্রকল্প ও আধুনিক চিন্তাবৃত্তি

কুরআনের দার্শনিক প্রকল্প ও আধুনিক চিন্তাবৃত্তি

নভেম্বর ২১, ২০২৩
রোয়াকুল আযহার: সোনালী যুগের মসজিদভিত্তিক দরসগাহ

রোয়াকুল আযহার: সোনালী যুগের মসজিদভিত্তিক দরসগাহ

নভেম্বর ২১, ২০২৩
ইতিহাসের জন্মভূমি: মিসরে ইসলামের সোনালী অতীত

ইতিহাসের জন্মভূমি: মিসরে ইসলামের সোনালী অতীত

নভেম্বর ১০, ২০২৩
ADVERTISEMENT

Search

No Result
View All Result

বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন

  • আল আযহার ব্লগ সম্পর্কে
  • আল আযহার ব্লগ পরিবার
  • আপনিও লিখুন
  • বিজ্ঞাপন ও যোগাযোগ

সম্পাদনা পরিষদ

সম্পাদক: সাজ্জাদ আকবর
সম্পাদনা সহকারী : ইরফান উদ্দীন

যোগাযোগ

শারেউল ইয়ামানী, খালিদ বিন ওয়ালিদ স্ট্রীট, তাব্বা, মাদীনাতু নাসর, কায়রো।

ফোন: +201554883928
ইমেইল : awsbe.org@gmail.com

© 2023 All rights reserved by AWSBE- Azhar Welfare Society Bangladesh, Egypt. Idea & design planned by Sajjad Akbar. Developed by GM RABBANY.

আপনিও লিখুন
  • প্রচ্ছদ
  • বিশেষ লেখা
  • যারা লিখছেন
  • সমসাময়িক
  • হৃদয়ে আল কুদস
  • তত্ত্ব ও সমাজ
  • বই আলোচনা
  • ইতিহাস
  • ফিকহ
  • আকিদাহ
  • তুরাস
  • চিন্তাধারা
  • সাহিত্য
  • প্রাচ্যবাদ – পাশ্চাত্যবাদ
  • আল আযহার
  • সকল ক্যাটাগরি
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • সভ্যতা সংস্কৃতি
    • শিল্পকলা
    • জীবনদর্শন
    • ব্যক্তিত্ব
    • নারী
    • ক্যারিয়ার
    • তথ্য প্রযুক্তি
    • আঙিনা
    • প্রবাস জীবন
    • এন্টারটেইনমেন্ট
    • বিবিধ
      • ফিচার
  • Login
  • Sign Up
No Result
View All Result

© 2023 All rights reserved by AWSBE- Azhar Welfare Society Bangladesh, Egypt. Idea & design planned by Sajjad Akbar. Developed by GM RABBANY.

Welcome Back!

OR

Login to your account below

Forgotten Password? Sign Up

Create New Account!

OR

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In