‘ফিলিস্তিনে ইহুদি জাতির স্বপ্ন-সাধ বাস্তবায়নে আমার আশা এখন হতাশায় রূপ নিচ্ছে। আমি নিশ্চিত যে, সুলতান আবদুল হামিদ ক্ষমতায় থাকলে আমরা কোনদিনই আমাদের প্রতিশ্রুত ভূমিতে পা রাখতে পারব না!’
আক্ষেপ আর দীর্ঘশ্বাঃস নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন থিউডর হার্জেলের; ইন্টারন্যাশনাল জায়োনিস্ট লিডার।
আমরা আমাদের সুমহান সুলতানকেই স্মরণ করছি। যার ঈমানি অটলতা ও নিখুঁত আত্মবিশ্বাসের কাছে পরাজয় স্বীকারে বাধ্য হয়েছিল জায়োনিস্ট লিডার থিউডর হার্জেল। অর্থনৈতিক আশ্বাস থেকে অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থেকে রাজনৈতিক দুষ্টচাল— কোনটাই বাদ রাখে নি সুলতানকে হারাতে। কিন্তু সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ জায়নবাদীদের সব হুমকি, চাপ এবং সালতানাতের ঋণের দায়ভার উপেক্ষা করে কুদসের নিশানকে সর্বাগ্রে রেখেছেন। ফিলিস্তিনের জমিনকে আজাদ রেখেছেন। এভাবেই ইসলামি ইতিহাসে উমরীয় বিজয় ও সালাহি কুদস-মুক্তির সাথে যুক্ত হয়েছিল উসমানি প্রতিরোধের সোনালি অধ্যায়। সেই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক এই প্রবন্ধে আমরা তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ।
বলে রাখা ভালো, ইসলামের বিরুদ্ধে ইহুদিদের ষড়যন্ত্র এবং মুসলিমদের সাথে শত্রুতার শুরুটা অনেক আগে থেকেই। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইহুদিদের ধারাবাহিক খেয়ানত ও বিশ্বাসভঙ্গের কারণে মদিনা মুনাওয়ারা থেকে এবং পরবর্তীতে উমর রাদিআল্লাহু আনহু আরব-ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করেছিলেন তখন থেকেই ওদের ভেতরের কৃষ্ণতা প্রকাশ পায় এবং ওরা শত্রুতার দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। ইসলামের শত্রুর তো অভাব নেই— মুনাফিক মুলহিদ আরও কত কী; তবে ইহুদিরা ইতিহাসের কাল পরিক্রমায় মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর বিপজ্জনক ছিল।
উসমানি সালতানাতের উপর কূটনৈতিক চাপপ্রয়োগ
আন্তর্জাতিক জায়োনিস্ট ইহুদি আন্দোলনের প্রধান থিউডর হারজেল জায়োনিস্ট রাষ্ট্রের জন্য ইউরোপের সমর্থন পেয়েছিলো। জার্মানি ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মতো রাষ্ট্রগুলোর ইন্ধনে আরও নেচে উঠেছিলো সে। এজন্যই উসমানি সালতানাতকে কূটনৈতিক প্যাঁচে আটকানোর প্রয়াস পেয়েছিলো। আর এরই সূত্র ধরে সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ পর্যন্ত পৌঁছে ফিলিস্তিন তলবের প্ল্যান করেছিল। উসমানি সালতানাত তখন অর্থনৈতিক দুর্দশার শিকার। ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো ঋণ দেয়ার সুযোগ নানারকম মিশন পরিচালনা করছিলো উসমানি সালতানাতে। সালতানাতের অর্থনৈতিক বিষয়াবলিতেও হস্তক্ষেপ করছিলো। আর সুলতানও বাধ্য হচ্ছিলেন ইউরোপের সাথে তৈরি সমস্যা সমাধানের সুযোগ নিতে।
সুলতান আব্দুল হামিদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে আর্থিক প্রলোভন
এই সুযোগটা হার্জলের জন্য ইহুদি-সহায়তায় দ্বিতীয় আবদুল হামিদের নীতিকে প্রভাবিত করার একমাত্র উপায় ছিল। এই বিষয়ে হার্জেল তার আত্মজীবনীতে বলেছেন: ‘আমাদের অবশ্যই বিশ মিলিয়ন তুর্কি লিরা ব্যয় করতে হবে। তুরস্কের আর্থিক অবস্থার সংস্কারের জন্য । … এর মধ্যে দুই মিলিয়ন ফিলিস্তিনের মূল্য হিসেবে, আর বাকিটা ইউরোপীয় মিশন থেকে পরিত্রাণের জন্য। আমাদের উচিত হলো, ঋণ পরিশোধ করে উসমানি তুরস্ককে মুক্ত করে স্বার্থসিদ্ধি করা। তারপর আমরা প্রয়োজনে আরও অর্থায়ন করব। সুলতান কোনো নতুন ঋণের অনুরোধ করলে অর্থায়ন করবো।’
হার্জেল ব্যাপক যোগাযোগ করেন জার্মানি, অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, ইতালি এবং ইংল্যান্ডের কর্মকর্তাদের সাথে আর যোগাযোগের উদ্দেশ্য ছিল — সুলতান আব্দুল হামিদের সাথে সংলাপের আয়োজন করা। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ এ ল্যান্ডউ হার্জেলের ইহুদি বন্ধুকে পরামর্শ দেন যে, তার বন্ধু নিউলিনস্কির মাধ্যমে তার সাথে একটি সংলাপের ব্যবস্থা করতে। নিউলিনস্কি ছিলো আশ-শারক মেইলের এডিটর-ইন-চিফ। হারজেল আত্মজীবনীতে জানাচ্ছেন— আমরা ফিলিস্তিন পেলে তুরস্ককে প্রচুর অর্থ অনুদান করব, অনেক উপহার দেব, যেন সুলতান আমাদের জন্য মধ্যস্থতা করেন। বিনিময়ে আমরা তুরস্কের আর্থিক পরিস্থিতির নিষ্পত্তি করতে প্রস্তুত। সুলতানের মালিকানাধীন জমিগুলি আমরা সিভিল আইনে নিয়ে নেব, যদিও উসমানি তুরস্কে রাজকীয় এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির মধ্যে তেমন পার্থক্য ছিল না।
১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের জুনে হারজেল কনস্টান্টিনোপল সফরের অনুমতি পায় আর এই সফরে নিউলিনস্কি তার সাথে ছিলেন। সুলতান আব্দুল হামিদের সাথে তার ছিল গভীর সম্পর্ক। ফলে নিউলিনস্কি ইলদিজ প্রাসাদে হার্জেলের মতামত জানিয়ে সুলতান আব্দুল হামিদের সাথে মতবিনিময় করেন। সুলতান তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন — ইহুদিরা ফিলিস্তিন ব্যতীত অন্য কোনও প্রদেশে বসতি স্থাপন করুক? নিউলিনস্কি উত্তরে বলেছিলেন— ফিলিস্তিনকে ইহুদিরা প্রথম ভূমি মনে করে, তাই ইহুদিদের আকাঙ্ক্ষার ভূমি ফিলিস্তিন। সুলতান জবাব দিয়েছিলেন— ফিলিস্তিনকে শুধুমাত্র ইহুদিদের ভূমি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। বরং, এটি অন্য সব ধর্মানুসারীর ভূমি হিসেবে বিবেচিত।’ সুলতানের জবাব শুনে নিউলিনস্কি উত্তর দিয়েছিলেন যদি এবার ফিলিস্তিন পুনরুদ্ধার না হয়। ইহুদিরা তাহলে আর্জেন্টিনায় যাওয়ার চেষ্টা করবে।
সুলতান আবদুল হামিদ নিউলিনস্কির মাধ্যমে হার্জেলের কাছে এই বলে বার্তা পাঠান— আপনার বন্ধু হার্জেলকে এই বিষয়ে নতুন পদক্ষেপ না নেওয়ার পরামর্শ দিন। কারণ, আমি পবিত্র ভূমির এক ইঞ্চিও ছাড়বো না। এটি আমার সম্পত্তি নয় বরং আমার জনগণের সম্পত্তি। আমার পূর্বপুরুষেরা এই ভূমির জন্য যুদ্ধ করেছেন এবং তারা তাদের তাজা রক্তে ফিলিস্তিনকে সিক্ত করেছেন। আমি সালতানাতে থাকতে কোনদিন ফিলিস্তিনকে ইহুদিদের হাতে অর্পণ করব না। আমি না থাকলে ফিলিস্তিন বিনামূল্যেও পাওয়া সম্ভব। অন্যথায় আমাদের রক্তাক্ত মৃতদেহ মাড়িয়ে ফিলিস্তিনে যেতে হবে, কিন্তু আমি তো সেই স্পর্ধা দেখাতে দিব না কাউকে।
কূটনৈতিক পন্থা অবলম্বন এবং আর্মেনিয়ানদের শান্ত করার প্রতিশ্রুতি
আর্থিক প্রলোভন দেখিয়েও যখন কাজ হলো না, এবার হারজেল সুলতান আবদুল হামিদকে আশ্বস্ত করার জন্য ভিন্ন উপায় অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নিলো। নিউলিনস্কির মাধ্যমে সে আর্মেনিয়ান ইস্যুতে কিছু করার চেষ্টা করেছে। এ সম্বন্ধে হার্জেল বলেছে — সুলতান আমাকে তার জন্য এমন কিছু বলেছিলেন, যা আর্মেনিয়ান ইস্যুকে প্রভাবিত করবে। অর্থাৎ, ইউরোপীয় সংবাদপত্রে যেন তুর্কিদের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ লেখালেখি ও প্রচারণা বন্ধ হয়, সেই ব্যবস্থা করা হবে।
অর্থনৈতিক প্রেসার ও অর্থ-লালসার পুনরাবৃত্তি
হারজেল সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের সাথে পূণরায় সাক্ষাতের চেষ্টা করলো। আর সেটা ছিলো মহারাজ দ্বিতীয় ইউলিয়ম কনস্টান্টিনোপল সফরের সময়। কিন্তু ইলদিজ প্রাসাদের দায়িত্বশীলগণ অনুমতি দেন নি। তবে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে অব্যাহত যোগাযোগের ফলে দুবছর (১৮৯৯-১৯০১ ইং) পর সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছিলো হারজেল। দু’ঘন্টা সময় পায় সুলতানের কাছ থেকে। সুলতানকে সে কথা দিয়েছিলো যে, ফিলিস্তিনে ইহুদিরাষ্ট্র গড়তে দিলে ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত ধনী ইহুদি ব্যাংকগুলো উসমানি সাম্রাজ্যকে সহায়তা করবে এবং ১৮৮১ ইং সন থেকে গৃহীত ঋণের দায়ভার গ্রহণ করবে। এমনকি সুলতানের সাথে বলা এই কথা কাউকেই জানাবে না সে।
হার্জলকে সাক্ষাতদানের সময় সুলতান আবদুল হামিদ বলার চেয়ে বেশি শুনছিলেন। তিনি হার্জলের সাথে ধীরে ধীরে কথা বলতেন যেন হারজেল তার মনে আসা সমস্ত ইচ্ছা , পরিকল্পনা এবং চাহিদার কথা বলার আগ্রহ পায়। এর ফলে হারজেল মনে করে যে সে তার মিশনে সফল হয়েছে।কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে বুঝতে পারে, সে আব্দুল হামিদের কাছেও ব্যর্থ হয়েছে এবং শেষ সুযোগটাও হারাতে যাচ্ছে।
দ্বিতীয় আবদুল হামিদের সাথে হার্জলের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। হার্জেল লিখেছে : যদি সুলতান ইহুদিদেরকে ফিলিস্তিন দান করেন, তাহলে আমরা তুর্কীর আর্থিক পরিস্থিতি ঠিক করে দিব। ইউরোপ মহাদেশের স্বার্থে আমরা তৈরি করব এশিয়ার বিরুদ্ধে দুর্ভেদ্য দুর্গ। আমরা অনগ্রসরতার বিরুদ্ধে একটি সভ্যতা গড়ে তুলব এবং আমরা বিশ্বের সমস্ত অংশজুড়ে প্রভাব ছড়াব। ইউরোপে আমাদের বিশ্বস্ততা নিশ্চিত করার জন্য সবই করব।
ইহুদি বিবৃতিতে হুমকির ছায়া
সুমহান সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ মনে করতেন, যেকোন মূল্যে ইহুদিদেরকে আরবদের থেকে দূরে রাখা আবশ্যক। যেন আরবের স্বভাবজাত সৌন্দর্য অটুট থাকে। সেজন্য উসমানি ইহুদিদেরকে হারজেলের চিন্তা থেকে দূরে রাখা হতো এবং প্রয়োজনে হুমকিও দেয়া হতো। সুলতান আবদুল হামিদের সাথে হার্জলের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও, হার্জল লিখেছিলেন:
ফিলিস্তিনকে ধীরে ধীরে হস্তগত করতে হবে এবং তা সহিংসতা প্রদর্শন ছাড়াই। আমরা দরিদ্র ইহুদি আদিবাসীদের প্রতিবেশী দেশে চলে যেতে উতসাহিত করব। প্রতিবেশী দেশগুলি তাদের জন্য চাকরি নিশ্চিত করবে আর আমাদের দেশে তাদের চাকরি বাধাগ্রস্ত করা হবে। জমি-জমা দখল করবে ইহুদি কোম্পানির গোপন এজেন্টরা, যা পরে ইহুদিদের কাছেই বিক্রি করবে। তবে ইহুদি কোম্পানীই রিয়েল এস্টেট ক্রয়-বিক্রয়ের বাণিজ্য তত্ত্বাবধান করবে এই শর্তে যে, এর বিক্রয় শুধুমাত্র ইহুদিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। হারজেল লিখেছে: “সুলতান আব্দুল হামিদের সাথে আমার কথা বলে বুঝলাম যে, তুরস্কের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন কিংবা যুদ্ধে পরাজিত করা ছাড়া তুরস্কের কাছ থেকে লাভবান হওয়া সম্ভব নয়।
সুমহান সুলতানের একমাত্র বক্তব্য ও অটল সিদ্ধান্ত
সুলতান আবদুল হামিদ জায়োনিস্ট-গোল জানতেন। তিনি তার রাজনৈতিক স্মৃতিচারণে লিখেছেন— জায়োনিস্ট নেতা হার্জেল আমাকে মানাতে এবং তার গপ্পোকথা বিশ্বাস করাতে পারবে না। যেদিন ইহুদি সমস্যার সমাধান হওয়ার সেদিন তা ইহুদীদের হাতেই হবে। হারজেলের দিক থেকে প্রচেষ্টা তো ভালো যে, সে তার ইহুদি ভাইদের জন্য জমি সুরক্ষিত করতে চাচ্ছে। কিন্তু সে ভুলে গেছে যে, সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য বুদ্ধিমত্তা যথেষ্ট নয়…!! আমি তো বুঝি ও উপলব্ধি করি যে, ইহুদিরা ফিলিস্তিনে শুধু জমিজিরাত করবে না বরং তারা সরকার গঠন এবং প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রতিজ্ঞাও করে বসেছে গোপনে। আমি তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ভালভাবে বুঝি। কিন্তু ইহুদিদের এতোটাই অভার কনফিডেন্স যে, ওরা ভেবেই নিয়েছে আমি ওদের প্রচেষ্টায় পাশে থাকব ; ঠিক যেমন আমি উসমানি ইহুদিদের প্রশংসা ও সেবা করি। কিন্তু সবকিছু সত্ত্বেও আমি ফিলিস্তিন-ইস্যুতে আমার উসমানি ইহুদি নাগরিকদেরও বিন্দুমাত্র ছাড় দিই না।
জেরুজালেম সম্পর্কে সুলতান আব্দুল হামিদ দ্বিতীয় বলেছেন— কেন আমরা আল-কুদস ত্যাগ করব? এটি সর্বদা আমাদের ভূমি ছিলো ও থাকবে। এটি আমাদের পবিত্র শহরগুলির একটি। আর এটি একটি ইসলামি ভূখন্ডে থাকাই যৌক্তিক । বায়তুল মাকদিসের ভূখণ্ড অবশ্যই শুধু আমাদের থাকবে।
থিওডর হার্জেলের কথা শোনার পেছনে সুলতান আবদুল হামিদের উদ্দেশ্য ছিল তিনটা বিষয় জানা—
১.ইহুদি পরিকল্পনার সত্যতা
২. ইহুদিদের বৈশ্বিক শক্তি এবং ক্ষমতার পরিধি ৩. অটোমান সাম্রাজ্যকে বিপদ থেকে রক্ষার পথ তৈরি করা।
সুলতান আবদুল হামিদ অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে ইহুদিদের উপর নজরদারি করতে এবং ওদের কীর্তিকলাপের রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দেন। তিনি দুটি অপরিবর্তনীয় ফরমান জারি করেন— প্রথমটি ২৮ জুন ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে এবং অন্যটি ৭ জুলাই ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে। প্রথম ফরমান হলো— ইহুদিদের শাহসানিদ রাজ্যগ্রহণে অনাগ্রহ ও অস্বীকার। আর দ্বিতীয় ফরমান হলো— মন্ত্রিপরিষদ ফিলিস্তিন ইস্যুটির যাবতীয় বিষয়াবলি সুক্ষ্মতম পর্যালোচনা নিষ্পত্তিমূলক সিদ্ধান্ত নিবে। (ইহুদি এবং অটোমান সাম্রাজ্য, পৃষ্ঠা ৮৮)
সলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ প্যালেস্টাইনের ইহুদিদের কাছে জমি বিক্রি না করার প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইহুদিদেরকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে একতিল পরিমাণ সুযোগ না দেওয়ায় কঠোর অবস্থানে ছিলেন, যেন ইহুদিরা ফিলিস্তিনের জমি নিতে না পারে। তখন জায়োনিস্ট ইহুদিবাদী সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের চক্রান্তে লিপ্ত হলো। সুমহান সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের সততা ও অটলতাকে উপলব্ধির জন্য হারজেলের এই কথাই যথেষ্ট যে—ফিলিস্তিনে ইহুদি জাতির স্বপ্ন-সাধ বাস্তবায়নে আমার আশা এখন হতাশায় রূপ নিচ্ছে। আমি মোটামুটি শিউর যে, সুলতান আবদুল হামিদ ক্ষমতায় থাকলে আমরা কোনদিনই আমাদের প্রতিশ্রুত ভূমিতে পা রাখতে পারব না।