পশ্চিমা প্রোপাগান্ডা, চাইলে দুনিয়ার যেকোনো প্রান্ত থেকে মানুষকে এক করে ফেলতে পারে। জড়ো করতে পারে যেকোনো উদ্দেশ্যে, যেকোনো লক্ষ্যে। যেকোনো কারণেই হোক, এরা দেশে দেশে সামরিক ক্যু, সংঘাত, ভয়াবহ সংঘর্ষ এবং কথিত ‘পরিবর্তনের সংগ্রাম’ তৈরি করতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শান্তিপ্রিয় দেশকে বলতে পারে সবচেয়ে ভয়াবহ দেশ। বলতে পারে বিশ্বশান্তির জন্য এক ভয়াবহ হুমকি। এরা পশ্চিমের এক গাদা দেশ যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সারা দুনিয়াকে আতঙ্কের সভ্যতা বানিয়ে রেখেছে, তাদেরকেই তুলে ধরতে পারে দুনিয়ার শান্তি ও গণতন্ত্রের প্রধান রক্ষক হিসেবে। এবং বেশিরভাগ মানুষ তা বিশ্বাসও করে। পশ্চিমের প্রায় সকল মানুষ এসব বিশ্বাস করে থাকে। দুনিয়াজুড়ে বেশিরভাগ মানুষই তা বিশ্বাস করবে কারণ পশ্চিমা প্রচারণা এত নিখুঁত, উন্নত ও অগ্রসর।
গত শতাব্দীতে খুব কম ব্যক্তিই আছেন যাদের এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাঈদের (১৯৩৫-২০০৩ খ্রি.) সাথে তুলনা করা যায়। একজন মহান লেখক এবং তাত্ত্বিক হিসেবে তিনি ছিলেন অনন্য সাধারণ। সাহিত্য থেকে রাজনীতি যে ক্ষেত্রেই তাঁর অবতরণ ঘটেছে, দেখিয়েছেন তাতে আপন পৌরুষ। জর্জ ডব্লিউ বুশ হোক বা এরিয়েল শ্যারন, তার এই নির্ভীক সক্রিয়তাকে ভয় পেয়ে চলতেন। আর তাই ইরাক যুদ্ধের শুরু থেকেই তার জন্য সিএনএন এবং ফক্সের মতো টিভি চ্যানেলগুলি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ব্রিটিশ এবং মার্কিন সংবাদপত্রগুলো তার সাক্ষাৎকার এবং বিবৃতি প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছিল।
পশ্চিমের সরকারগুলো মুসলিম দুনিয়ার ওপর আধিপত্য বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন স্টেরিওটাইপ এবং স্ব-কল্পিত সংকট-সমস্যা তৈরি করে। মুসলমানদের বিলাসপ্রিয়, হিংসাত্মক, ধর্মীয়ভাবে গোঁড়া এবং জ্ঞানবিমুখ ও চিন্তারিক্ত হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে তারা। এই লক্ষ্যে তারা প্রথমে তাদের ওরিয়েন্টালিস্ট বা প্রাচ্যতাত্ত্বিকদের ব্যবহার করেছিল, যার বিশদ পর্যালোচনা হাজির করেছেন এডওয়ার্ড সাঈদ তার বিশ্বখ্যাত ‘ওরিয়েন্টালিজম’ গ্রন্থে। আর এখন তাদের মিডিয়া, সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলি ঠিক একই কাজ করে যাচ্ছে।
এডওয়ার্ড সাঈদ মোট বাইশটি গ্রন্থ লিখেছেন। ‘কাভারিং ইসলাম’ নামে তাঁর একটি বই প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে। বিশিষ্ট লেখক ও উত্তর উপনিবেশী তাত্ত্বিক ফয়েজ আলম ‘আমাদের জ্ঞানচর্চায় এডওয়ার্ড সাইদ’ শীর্ষক একটি রচনায় বইটির প্রতিপাদ্য বয়ান করে লিখেছেন। ‘কাভারিং ইসলাম’ এ সাঈদ প্রতিদিনের সংবাদ পরিবেশন, ফিচার, প্রবন্ধ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার ঘেঁটে দেখান পশ্চিমের প্রচারমাধ্যম দীর্ঘদিন ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের খুনি, সন্ত্রাসী, অপহরণকারী হিসেবে চিত্রিত করে আসছে।
আলম তার রচনায় বলেন, ফিলিস্তিনি মুসলমানদের স্বাধীনতাসংগ্রামকে অথবা সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের মুখে আত্মরক্ষার জন্য ইরানের যুদ্ধকৌশলকে ব্যাখ্যা করা হয় সন্ত্রাসী তৎপরতা বলে। কিন্তু আগ্রাসনের নিন্দা করা হয় না। এ হলো প্রচারমাধ্যমের ভাষ্য সৃষ্টির রাজনীতি, প্রাচ্যতত্ত্বের বাস্তব প্রয়োগ। প্রাচ্যতত্ত্ব মুসলমানদের সম্পর্কে যে নমুনা তৈরি করেছে, তাই চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে গোটা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর। ষড়যন্ত্র আর পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা সন্ত্রাসী কিছু গোষ্ঠীকে দৃষ্টান্ত দেখিয়ে বলা হচ্ছে ইসলাম সন্ত্রাসের ধর্ম। মুসলমান মানেই সন্ত্রাস। সাঈদ আমাদের পশ্চিমা প্রচারমাধ্যমের এই তৎপরতা ও তার ভাষ্যের রাজনীতি সম্পর্কে সতর্ক করেন। এক অর্থে ‘কাভারিং ইসলাম’ পশ্চিমের প্রচার মাধ্যম সম্পর্কিত বিশ্লেষণ।
যেমন মার্কিন টেলিভিশনের ভূমিকার পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে সাঈদ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত প্রধান টেলিভিশন ভাষ্যকার এ বিষয়ে জোর দেন যে, মুসলিমরা এই দেশটিকে ঘৃণা করে এবং যখন কথোপকথনটি একটি কাব্যিক শৈলীতে রূপ নেয়, তখন তারা বলেন সংকটটি ঘূর্ণিঝড়ের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। তারপর একটি সমাবেশ প্রদর্শন করা হয় যা আল্লাহু আকবরের শ্লোগান দেয় এবং একই সাথে বলা হয় যে সমাবেশের উদ্দেশ্য আমেরিকার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা। যখন ইরান এবং শিয়াদের উল্লেখ করা হয়, তখন সকল ছবিতে এমন যুবকদের দেখানো হয় যারা মাতম করছে ও নিজেকে মারধর করছে। এর পরপরই, এমন প্রোগ্রাম উপস্থাপন করা হয় যেখানে আমেরিকান স্কুলের সুস্থ বাচ্চাদের দেখানো হয় যারা বোরকা পরে না এবং তাদের মধ্যে কোনো মোল্লা পাওয়া যায় না।
সংবাদপত্রের সাংবাদিকরা জানেন যে টেলিভিশন সংবাদদাতারা প্রতিদিন তাদের গল্প এমনভাবে উপস্থাপন করে যা অন্যদের আকর্ষণ করে। তাই তারা পাঠকদের আকৃষ্ট করার কলা-কৌশল চিন্তা করে। এটাই তাদের বাস্তব কভার পেজ এবং রিপোর্টিং থেকে দূরে রাখে। টেলিভিশনের অনুষ্ঠান শুধুমাত্র তাদের জন্য নয় যারা খবর শুনতে চায়, বরং সরকার ও রাজনৈতিক মহলের জন্যও হয়। এই অনুভূতি আমেরিকান সাংবাদিকদের সীমিত এবং সংক্ষিপ্ত চিন্তা করতে বাধ্য করেছে। ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জন্য ইসলাম একটি অপ্রীতিকর সংবাদ, যে বিষয়ে মিডিয়া, সরকার ও বিশেষজ্ঞদের ঐকমত্য যে, ইসলাম পশ্চিম ও পশ্চিমা সভ্যতার জন্য হুমকিস্বরূপ। ইসলামের নেতিবাচক ধারণাটি মাগরিবে বেশি উপস্থাপন করা হয়েছে এবং সেখানে যে ইসলামের কথা বলা হয়, তা ইসলামের আসল রূপ নয়। যদি ইসলামের উপর ইতিবাচক ও গুরুতর কোনো বই প্রকাশিত হয়, তবে এমন কয়েকটি সংবাদপত্রে এর পর্যালোচনা প্রকাশিত হয়, যার প্রচার সীমিত। অতঃপর বইটি উধাও হয়ে যায়। সমালোচক-সাংবাদিকরা সত্যকে দেখা ও দেখানোর পরিবর্তে, পূর্ব থেকে যে ধারণা ও ধারা চলে আসছে, বরাবর তা-ই তারা জারি রেখেছে।
ইসলাম ও মুসলমানদের তরফে মাগরিব বিশেষ করে মার্কিন মিডিয়ার মনোভাবকে, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং সর্বদিক থেকে ভুল আখ্যা দিয়ে, এডওয়ার্ড স্বীকার করেন — মিডিয়ার এই নেতিবাচক মনোভাব জনমনে ইসলাম ও মুসলমানদের একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। তিনি ইসলাম ও মুসলমানদের খেলাপে, পশ্চিমের বাড়াবাড়ি, অপরিবর্তনশীল মনোভঙ্গি এবং গভীর শত্রুভাবাপন্নতার উল্লেখ করে এই সত্য স্বীকার করেছেন যে, পশ্চিমের দৃষ্টিতে ইসলাম হচ্ছে হাইজ্যাকিং ও সন্ত্রাসবাদের অপর নাম। এইভাবে সারা বিশ্বের মুসলমানদের মনে এটা গেঁথে গেছে যে, পশ্চিমা এবং বিশেষ করে খ্রিস্টান শক্তিগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে। পাশ্চাত্য ও মুসলমানদের এই চিন্তা-ভাবনা উভয়ের শত্রুতাকে আরও গভীর করে দিয়েছে। এমতাবস্থায় প্রতিটি বিবেকবান মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে যে, ইসরাইল মুসলিম ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে এবং কিছু আরব মুসলিম ভূখণ্ডকে জোরপূর্বক নিজের দেশে দাখিল করে নিয়েছে। তাহলে পশ্চিমা শক্তিগুলো কেন তাকে এর জন্য শাস্তি দেয় না? সর্বোপরি, মুসলিম দেশ ও মুসলিম জনগণই বা কেন অবজ্ঞা ও অসম বর্বর আগ্রাসনের শিকার? আজ পরিস্থিতি এতটাই পতিত যে, পশ্চিমারা বিশেষ করে আমেরিকার সংখ্যাগরিষ্ঠরা ইসলামকে ফাসাদ ও সমস্যার আরেক নাম আখ্যা দেয়।
সাঈদ পশ্চিমা মিডিয়ার ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, পশ্চিমা মিডিয়াই নির্ধারণ করে কী সত্য এবং কী মিথ্যা, এবং মিডিয়া নেহায়েত সীমিত পরিসরে এই বিষয়টি নির্ধারণ করে রেখেছে যে, ইসলাম সম্পর্কে পশ্চিমাদের কী জানা উচিত এবং কী নয়। নারীদের হিজাব, হত্যায় ফাঁসিদণ্ড, ধর্মবিরোধী বইপত্র পোড়ানোর অবৈজ্ঞানিক প্রথা, মদ ও জুয়া নিষিদ্ধকরণ এবং বিয়ের আগে ও পরে যৌনবিষয় প্রকাশের বাধ্যবাধকতার উল্লেখ করে, এই মিডিয়া ইসলামকে উপস্থাপন করে থাকে। আলজেরিয়া, লেবানন ও মিশরকে চরমপন্থী, পাকিস্তান, সৌদি আরব ও সুদানকে পশ্চাদপদ ও সংকীর্ণমনা; ফিলিস্তিন, কাশ্মীর ও ইন্দোনেশিয়াকে বৈশ্বিক সংঘাতের কারণ হিসেবে এবং তুরস্ক ও ইরানকে সবচেয়ে বিপজ্জনক ইসলামিক দেশ হিসেবে হাজির করা হয়। এডওয়ার্ড শনাক্ত করেন— পশ্চিমারা চায় না জনসাধারণ জানুক ইসলামে পুরুষ এবং নারী সমান, ইসলাম অপরাধ এবং তার কারণ-উপকরণ মোকাবেলায় অত্যন্ত কঠোর। এটি একটি জ্ঞান এবং কল্যাণের ধর্ম যা মানুষের নৈতিক প্রশিক্ষণের উপর জোর দেয় এবং ভ্রাতৃত্ব এবং ঐক্যের মতো শক্তিশালী সভ্যতাগত নীতিমালার শিক্ষা দেয়। সামাজিকভাবে ইসলাম ন্যায় ও ইনসাফের শিক্ষা দেয় এবং আধ্যাত্মিকভাবে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবহারিক ধর্ম। তিনি বলেন, পশ্চিমা মিডিয়া চিন্তার স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের নামে ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তার মনে মৌলবাদের ভয় রয়েছে, কিন্তু তারা এটা জানে না যে, মৌলবাদের সাথে ইসলামের চেয়ে খ্রিস্টবাদ, ইহুদিবাদ এবং হিন্দু ধর্মমতের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
বলা বাহুল্য, মার্কিন ও মাগরিবি মিডিয়ার নীতি সর্বদা এটাই থেকেছে যে, কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটলে তদন্তের আগে মৌলবাদী মুসলমানদের ওপর দোষ চাপানো হবে। কিন্তু সন্ত্রাসীরা ও মৌলবাদীরা কি শুধুই মুসলমান? এবং ইসলামি অনুশাসনের দৃঢ়ভাবে অনুশীলন করলেই কি মৌলবাদ চর্চায় অভিযুক্ত হতে হবে? এই প্রশ্নগুলোর খুব স্পষ্ট উত্তর আছে। প্রকৃতঅর্থে একজন মৌলবাদী হলেন যিনি তার ধর্মের মূল নীতিতে বিশ্বাস করেন। যদি একজন মুসলিম মৌলবাদী হয়, তাহলে তা মোটেই আক্রমণাত্মক উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে নয়। ইসলামের মূল নীতি হলো তাওহীদ, এক আল্লাহ এবং নবী মুহাম্মদ সা. কে আল্লাহর শেষ নবী হিসাবে স্বীকার করা এবং কুরআন খোদার নির্দেশিত সর্বশেষ গ্রন্থ বলে বিশ্বাস করা। মুসলমানরা যে খোদায় বিশ্বাস করে, তিনি সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা, তিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। এই ভিত্তিতে, ইসলাম মুসলিম এবং অমুসলিমদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না যে, আল্লাহ শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য, অন্য ধর্মের অনুসারীদের নয়। মুহাম্মদ সা. আল্লাহর শেষ নবী যাকে ‘রহমতুল লিল আলামিন’ তথা বিশ্বজগতের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে। মুসলিম ধর্মগ্রন্থ কুরআনের বিষয়বস্তু মানুষ। কুরআন মুসলিম ও অমুসলিম উভয়কেই ভালোর নির্দেশ করে ও মন্দ থেকে নিষেধ করে। কাজেই একজন মুসলিমের মৌলবাদী হওয়া মানে পশ্চিম বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে যাওয়া নয়। এটা মাগরিবি মিডিয়ার সৃষ্ট প্রচারণা যা পশ্চিম ও মার্কিন সমাজে ইসলামোফোবিয়ার জাল বিস্তার করেছে।
আমেরিকান লেখক-সাংবাদিক স্টিফেন সোলাইমান সোয়ার্জ (জন্ম: ১৯৪৮-) দেখিয়েছেন ইসলামোফোবিয়া কীভাবে পশ্চিমা মানসে বর্ণবাদ, এন্টিসেমিটিজম ইত্যাদির মতো অমোচনীয় রোগ হয়ে গেছে! সোয়ার্জের বিচারে ইসলামোফোবিয়া হলো— ‘সমগ্র ইসলাম এবং তার ইতিহাসকে ঘৃণা করার সেই চর্চা যা ধারাবাহিক পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে। এটি বহু শতাব্দী ধরে চলে আসা অসুখের ফসল, যা আধুনিক দুনিয়ায় ব্যাপক মাত্রা ও ভয়াবহতা নিয়ে চিৎকৃত। সেটা বৈধতা দিচ্ছে ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী মিথ্যাকে, হত্যাকে, লুণ্ঠনকে, যুদ্ধকে, দখলকে, অবিচারকে!’
ফিলিস্তিনের মুক্তির ন্যায্যতার আওয়াজকে সন্ত্রাসের প্রচারে ঢেকে রেখে জায়নবাদী দখলদারির অবৈধতাকে সমাদর করা হচ্ছে কীসের প্রশ্রয়ে? প্রশ্রয় দিচ্ছে ইসলামোফোবিয়া। এমনই জায়গা থেকে ১৯৮৫ সালে অ্যাডওয়ার্ড সাঈদ শব্দটিকে একাডেমিক জার্নালে হাজির করেন। বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকে এর ব্যবহার বেড়ে চলে। বিশেষত সভ্যতার সংঘাত তত্ত্বের নতুন উল্লম্ফনে ইসলামভীতি ও ঘৃণা দেশে দেশে চিন্তা ও রাজনীতির কেন্দ্রে আসতে থাকে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান রানিমেইড ট্রাস্ট ১৯৯৬ সালে সব ধর্মাবলম্বী বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ১৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করে, যার প্রধান ছিলেন অধ্যাপক গরডন কনওয়ে। এই কমিটি কিছু রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলো। রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। অনেকেই একে অবাস্তব বলে উড়িয়ে দেন! বিশ বছর পরে রানিমেইড প্রকাশ করে এর ফলোআপ। এর মানে পরিষ্কার, ইসলামোফোবিয়া কমছিল না; বরং সত্য হলো —বেড়েই চলেছে।
বস্তুত, ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী প্রচারণা, এই মৌলবাদ, এই সন্ত্রাস এগুলো নিছকই রাজনৈতিক শব্দ এবং স্বার্থ ও লক্ষ্য অর্জনের একটি আক্রমণাত্মক হাতিয়ার। সাঈদ মাগরিবি মিডিয়ার এই মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডার বদআছর কী হয়েছে তা উল্লেখ করে বলেন, এই অনুশীলন বা আচরণের ফলে পশ্চিমাদের মনে ইসলামধারণা সীমিত হয়ে পড়েছে এবং মুসলমানদের বিশ্বাস, ইসলামের প্রচারকর্তা এবং ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। ইসলামের প্রেক্ষাপটে সহিংসতা, পশ্চাৎপদতা, রক্ষণশীলতা এবং সন্ত্রাসবাদ শব্দগুলোকে এইজন্য বারবার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে এবং হচ্ছে, যাতে ইসলাম জনমনে জায়গা পেতে না পারে। পৃথিবীর অন্য কোন ধর্ম, সংস্কৃতি বা মানুষকে নিয়ে যে ধরনের কথা বলা হয় না, পশ্চিমা মিডিয়া ইসলামকে নির্দ্বিধায় তার টার্গেট করে। ইসলামের প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন। এডওয়ার্ড পাশ্চাত্য সমালোচকদের জ্ঞানের অভাবের কথা তুলে ধরেন এবং বলেন যে, তাদের জ্ঞানের অভাব লুকানোর জন্য তারা ইসলাম এবং এর মধ্যে থাকা জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে অসুস্থ মানসিকতার উপাখ্যান হিসেবে উপস্থাপন করে। পশ্চিমের দৃষ্টিতে, ইসলাম এবং মৌলবাদ পশ্চিমাদের কাছে মোকাবিলার জন্য ঠিক তাই, যেমনটা শীতল যুদ্ধের সময় কমিউনিজমের সাথে হয়েছিল।
সাঈদের মতে, ইসলামি সমাজে হীনমন্যতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অভাব, চরমপন্থা ও মৌলবাদী মতাদর্শের অবাস্তব চিত্র, ইসলাম ও মুসলমানদেরকে পশ্চিমের কাছে অপ্রিয় ও নিগৃহীত করে তুলেছে, যেখানে হাকিকত হলো, পশ্চিমারা সর্বদা ইসলামকে নিজস্ব স্বার্থে ব্যবহার করেছে। মাগরিবি মিডিয়ার নজরে, ইসলাম এবং আরব এক ও অভিন্ন এবং তাদের উপর সময়ে সময়ে আক্রমণ করা যেতে পারে। ইসলাম সম্পর্কে পশ্চিমা মিডিয়ার নেতিবাচক প্রচারণার ফল এই যে, আজ যদি আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজেগুলোতে অধ্যয়নরত আমেরিকান ছাত্রদের প্রশ্ন করা হয় মুসলমান কাকে বলে, সকলের সাধারণ উত্তর হবে যে, ‘বন্দুকধারী, দাড়িওয়ালা গোঁড়া সন্ত্রাসী; যাদের জীবনের উদ্দেশ্য তাদের মহান শত্রু আমেরিকাকে ধ্বংস করা, তাদের মুসলমান বলা হয়।’ পশ্চিমা মিডিয়া জিহাদের প্রেক্ষাপটে অগণিত ফিল্ম তৈরি করেছে যার ধরণ খুবই কট্টর ও ভয়ংকর, যা বিশ্বজুড়ে মুসলিম সন্ত্রাসীরা কোথায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তার গল্প বলে। এই ধরনের চলচ্চিত্রের উদ্দেশ্য হলো আমেরিকায় জিহাদের ভয় জাগানো এবং এটিকে তার সুবিধার জন্য ব্যবহার করা। বৃহৎ আকারের এমন ফিল্ম বানানো হচ্ছে, যার লক্ষ্য মানবতার শান্তি থেকে পতিত মুসলমানদের শয়তান হিসেবে চিত্রিত করা এবং পশ্চিম, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এমন একজন সাহসী এবং শক্তিশালী বীর হিসেবে উপস্থাপন করা যা এই মুসলমানদের সহজেই হত্যা করতে পারে। আরব ও মুসলিম সন্ত্রাসীদেরকে এমন ভিলেন হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে যাদের চোখে আমেরিকানদের হত্যা করার খায়েশ ঝলসে উঠে। এ জাতীয় চলচ্চিত্রগুলিতে, সমস্ত মুসলমানকে, পার্থক্য ছাড়াই, হিংসাত্মক এবং সহিংস হিসেবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি হত্যা-আবশ্যক বলে সাব্যস্ত করা হয়।
আধুনিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার দাবিদার পশ্চিমা শক্তিগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন সাঈদ। তার বয়ান, তাদের আধুনিকতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতা নিছক ভান, যার ছদ্মবেশে তারা ইসলামকে অসম্মান করার ধর্মীয় যুদ্ধ চালিয়ে যায়। পশ্চিমে, ইসলাম সম্পর্কে প্রামাণ্য এবং বাস্তবোচিত ধারণা খুব কমই পরিদৃষ্ট হয়। কারণ সেখানকার বাজার এমন একটি ইসলাম পরিবেশন করে; যা ক্রুদ্ধ এবং অন্যদের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং ষড়যন্ত্রের আশ্রয়ে বিকশিত হয়। সাঈদ, অধ্যাপক জন এল এসপোসিতো কে মাগরিবি মিডিয়ার দাবি ও বয়ানের বিপরীতে একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যিনি তার গ্রন্থে যুক্তিযুক্ত ও প্রামাণ্য রূপে পশ্চিমের ‘ইসলাম একটি হুমকিস্বরূপ’ মতাদর্শকে বাতিল প্রমাণ করেছেন।
এসপোসিতো তার বইয়ে মৌলবাদের বাস্তব ধারণা ও একে কেন্দ্র করে সৃষ্ট প্রচারণা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্টে ধরে, আপন পর্যবেক্ষণ ব্যক্ত করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘মৌলবাদ’ একটা সাধারণ তকমা হলেও সংবাদপত্র এবং পণ্ডিতদের মধ্যে ক্রমবর্ধমানহারে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বেশ কিছু কারণে এটা আমাদের কাছে অনেক কিছুই তুলে ধরে আবার একই সময়ে কিছুই বলে না। প্রথমত, যারা তাদের মৌলিক বিশ্বাস বা ধর্মের মৌলরূপে ফিরে যেতে চান তাদের মৌলবাদী বলা যেতে পারে। কঠিন অর্থে এখানে সকল প্র্যাকটিসিং মুসলিমকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে যারা কুরআনকে আল্লাহর কথা আর পয়গম্বর মুহাম্মদের সুন্নাহকে জীবনযাপনের মাননির্দেশক মডেল হিসাবে বিশ্বাস করেন। দ্বিতীয়ত, মৌলবাদ সম্পর্কিত আমাদের উপলব্ধি ও ধারণা ব্যাপকভাবে আমেরিকান প্রটেস্ট্যান্টিনিজম প্রভাবিত। ওয়েবস্টার’স টেন্থ নিউ কলেজিয়েট ডিকশনারি মৌলবাদ কথাটিকে সংজ্ঞায়িত করেছে এভাবে- ‘বিংশ শতাব্দীর প্রটেস্ট্যানিজম আন্দোলন হিসাবে যা বাইবেলের আক্ষরিক ব্যাখ্যাকে ক্রিশ্চান জীবনধারা আর শিক্ষার মৌলভিত্তি বলে গুরুত্ব দিয়েছে।’ বহু উদার বা মূলধারার ক্রিশ্চানের কাছে ‘মৌলবাদী’ কথাটি মানহানিকর বা অসম্মানজনক, কারণ একে নির্বিচারে যারা বাইবেলীয় অবস্থানের আক্ষরিক ব্যাখ্যার পক্ষাবলম্বন করে তাদের সবার বেলায়ই প্রয়োগ করা হয়ে থাকে এবং এভাবে তাদের অটল, অতীতমুখী এবং চরমপন্থী মনে করা হয়। এর ফলে মৌলবাদকে প্রায়শই সাধারণভাবে তাদের কথা বোঝাতে ব্যবহার করা হয় যারা অক্ষরবাদী এবং অতীতে ফিরে যেতে চায় ও অতীতকে ফের গড়ে তুলতে চায়। সত্যি বলতে মধ্য প্রাচ্যের খুব কম সংখ্যক ব্যাক্তি বা সংগঠনই এধরণের স্টেরিওটইপের সঙ্গে খাপ খায়। প্রকৃতপক্ষে বহু মুসলিম মৌলবাদী নেতারই উচ্চ শিক্ষা ছিল, সমাজে তাঁরা সম্মানজনক অবস্থান ভোগ করেছেন এবং আপন দর্শন প্রচার করতে আধুনিক প্রযুক্তিকে আয়ত্ত আনায় এবং স্কুল, হাসপাতাল আর সামাজিক সেবা সংস্থার মতো আধুনিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ছিলেন দক্ষ। তৃতীয়ত, ‘মৌলবাদ’-কে প্রায়শই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, চরমপন্থা, ধর্মান্ধতা আমেরিকা বিদ্বেষের সঙ্গে এক করে দেখা হয়। কিন্তু কেউ কেউ ধর্মীয় রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও, আমরা দেখব, বেশীরভাগই প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার অভ্যন্তরে থেকেই কাজ করে ।
অতএব, তার মূল্যায়ন হলো, ‘মৌলবাদ কে আমি ক্রিশ্চান পূর্বধারণা এবং পাশ্চাত্য স্টেরিওটাইপে ভারাক্রান্ত একরৈখিক হুমকি বলে মনে করি যার কোনও অস্তিত্ব নেই, বরং জুৎসই শব্দগুলো হওয়া উচিত “ইসলামি পুনরুত্থানবাদ” বা “ইসলামি অ্যাক্টিভিজম”, যেগুলো অপেক্ষাকৃত কম মূল্য ভারাক্রান্ত এবং ইসলামি ট্র্যাডিশনে প্রোথিত। সা¤প্রতিক বছরগুলোয় “রাজনৈতিক ইসলাম” এবং “ইসলামিজম” কথাগুলো সাধারণ ব্যবহারে উঠে এসেছে। ইসলামের পুনরুত্থান (ইহইয়া) এবং সংস্কার (ইসলাহ) -এর দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে যা প্রাথমিক ইসলামি আমল থেকে শুরু করে বর্তমান কাল পর্যন্ত ইসলামী শতাব্দীগুলোয় রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডকে অন্তর্ভুক্ত করে থাকে। এভাবে আমি ইসলামী মৌলবাদের পরিবর্তে বরং ইসলামী পুনরুত্থানবাদ এবং ইসলামী অ্যাক্টিভিজম এর কথা বলতেই পছন্দ করব।’
সাঈদ জানান, ইসরায়েলপন্থীরা ক্রমাগত এই ধারণা ছড়িয়ে দিচ্ছে যে ইসলাম একটি হুমকি, যাতে আমেরিকান এবং ইউরোপীয়রা ইসরাইলকে নিপীড়িত এবং মুসলমানদের নিপীড়ক হিসেবে দেখতে পারে। ইসলামকে হুমকি ঘোষণা করার উদ্দেশ্য হলো ইসলামবৈরিতায় ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী করছে সে সম্পর্কে আরবদের মনকে ধোয়া সমাচ্ছন্ন করা। এই দুটি দেশ মিশর, জর্ডান, সিরিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া এবং ইরাকের মতো মুসলিম দেশগুলিতে বোমা হামলা ও স্থল হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল এখনও চারটি আরব মুসলিম দেশের ভূখণ্ড দখল করে আছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে ইসরায়েলের এই সামরিক দখলদারিত্বকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছে।
এসব তথ্যের আলোকে সাঈদ মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগকে ‘মুসলমানরা পশ্চিমের আধুনিকতার প্রতি ক্ষুব্ধ’ -ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। সাঈদ বলেন, মুসলিমরা সেই শক্তিগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, যারা ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো স্বাধীন গণতন্ত্র বলে দাবি করে, কিন্তু দুর্বলদের সাথে তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং আত্মস্বার্থ ও অবজ্ঞার আচরণ করে। ফিলিস্তিন কবি মাহমুদ দারবিশ তাই বলেছিলেন, ‘আত্মঘাতী বোমাবাজদের আমরা স্বীকৃতি দিতে পারি না, আমরা ওদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমাদের উপলব্ধি করতে হবে কী কারণে এই তরুণরা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তারা এক অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন থেকে নিজেদের মুক্ত করতে চায়। কোন আদর্শ থেকে নয়, হতাশা থেকে তারা এই কাজ করছে।’
ইসলামের বিকৃত ভাবমূর্তি এবং এ সম্পর্কে যে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে, তার কারণে ইসলামকে বোঝার, দেখার বা শোনার কোনো ইচ্ছা পাশ্চাত্যে অবশিষ্ট নেই। মোটাদাগে ইসলাম সম্পর্কে তাদের মতামত হলো ইসলাম একেশ্বরবাদ, কিছু সেকেলে ঐতিহ্য এবং আচার-অনুষ্ঠানের সংমিশ্রণ মাত্র। অথচ ইসলাম একটি সার্বজনীন ও বিশ্বজনীন ধর্ম। বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চল এবং প্রতিটি অঞ্চলে এর অনুসারীদের পাওয়া যায়। তাদের বিশ্বাস-ভিত্তি হলো তাওহীদ বা একেশ্বরবাদ। পবিত্র কুরআনের শিক্ষাধারায় পার্থিব ও পরকালীন বিষয়গুলো অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও সহজ, যা নবীজীর হাদিস দ্বারা সবিস্তারে ব্যাখ্যাত। এরপর ইসলামে দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলো ‘ফিকহশাস্ত্র’ এবং উম্মাহর ঐকমত্য (ইজমা’) দ্বারা সমাধান করা হয়। যতদূর পোশাক এবং অন্যান্য বিষয়ের সম্পর্ক, ইসলাম মানুষকে ঋতু অনুসারে পোশাক পরার অনুমতি দেয়, তবে এমন পোশাক পরা উচিত নয় যা পরিধানকারীকে নগ্ন দেখায়, তার দেহ-সৌষ্ঠব অনায়াসে প্রদর্শিত হয়। কিছু ঐতিহ্য মুসলমানরা তাদের নির্দিষ্ট ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে গ্রহণ করেছে, যা এই বিশেষ এলাকায় বসবাসকারী অন্যান্য ধর্মের লোকেরাও গ্রহণ করেছে সমানতালে। তথাপি সেসব কিছুকে সম্পূর্ণরূপে ইসলামি ঘোষণা দিয়ে একদিকে পশ্চিমা এই মিডিয়াগুলো পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করছে, অন্যদিকে ইসলামকে উপহাস করছে। এ কারণে মুসলমানরা মাঝে মাঝে এসবের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখায়। কখনও কখনও এই প্রতিক্রিয়া সহিংসও হয়ে যায় যাকে অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করে বলা হয় যে, আমাদের সমাজ এবং সভ্যতা মুসলমান এবং তাদের বিশ্বাসের দ্বারা হুমকির সম্মুখীন। এই ইচ্ছাকৃত ও পরিকল্পিত আচরণ ও অনুশীলন ইসলামোফোবিয়া ও ইসলামবৈরিতাকে প্ররোচিত করে, প্রচার করে এবং প্রতিষ্ঠা দিতে চেষ্টা করে।
এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাইদ যে সততা, সত্যতা ও সাহসিকতার সাথে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি মাগরিব এবং মাগরিবি মিডিয়ার আচরণ ও মনোভাবের সমালোচনা করেছেন, পর্যালোচনা করে এর মুখোশ উম্মোচন করেছেন, তা যদিও তাকে পাশ্চাত্যের একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে এবং তীব্র উপেক্ষা ও সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু জ্ঞানতাত্তি¡ক ও চিন্তানৈতিক জগতে তিনি সবসময়ই একজন সৎ, নির্ভীক ও সত্যনিষ্ঠ লেখক ও সমালোচক হিসেবে স্মরিত ও নন্দিত হবেন। যাকে গভীরভাবে অধ্যয়ন ও বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে পাশ্চাত্য ও পাশ্চাত্য মিডিয়ার পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এবং এর অন্তর্নিহিত কার্যকারণগুলো অত্যন্ত স্পষ্টতার সাথে প্রতিভাত হয়ে ওঠে।
তথ্য সহায়তায় :
১. পশ্চিমা সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে, নোম চমস্কি ও আন্দ্রে ভিচেক, মুহাম্মদ গোলাম সরওয়ার অনূদিত, চৈতন্য, ২০১৯।
২. ওরিয়েন্টালিজম, এডওয়ার্ড ডবিøউ সাঈদ, ফয়েজ আলম অনূদিত, রেমন পাবলিশার্স, ২০০৫।
৩. এডওয়ার্ড সাঈদ কে তানকিদি নজরিয়াত কা তাজযিয়াতি মতালাআ, ড. রাবেয়া সারফরাজ, এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, ডিপার্টমেন্ট অব উর্দু, জি. সি. ইউনিভার্সিটি, ফয়সালাবাদ।
৪. দ্য ইসলামিক থ্রেট মিথ এন্ড রিয়েলিটি, জন এল এসপোসিতো, শওকত হোসেন অনূদিত, রোদেলা প্রকাশনী, ২০০৯।
৫. উত্তর উপনিবেশী মন, ফয়েজ আলম, সংবেদ, ২০১২।
৬. মনের উপনিবেশ মনের মুক্তি, মুসা আল হাফিজ, গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স, ২০২১।
৭. মাহমুদ দারবিশ পাঠ ও বিবেচনা, শরীফ আতিক উজ জামান, সংবেদ, ২০১০ ।