মুহাদ্দিস, ফকিহ আর অলি আওলিয়ার দেশ মিশর হাজার বছর ধরে ইসলামি শিক্ষার মশাল জ্বালিয়ে আসছে জ্ঞানের কা’বা খ্যাত আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত ধরে। দুনিয়াজুড়ে আল আযহারের দীনি খেদমত বিস্তৃত হয়েছে যুগে যুগে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মনীষীদের ছড়ানো জ্ঞানের আলোয় রাজধানী কায়রো স্বীকৃতি লাভ করেছে বিলাদুল ইলম তথা জ্ঞান-বিজ্ঞানে শহরের। প্রাচীনকাল থেকেই আযহার মসজিদের দরসেগুলো ইমল পিপাসু শিক্ষার্থীদের আনাগোণায় পরিপূর্ণ ছিল। এখানে দুনিয়ার বিখ্যাত শায়খগণ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার দরস দিয়ে এসেছেন আর শিক্ষর্থীরাও মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করতেন সেসব দরস। তাতে ছিল না কোন বর্ষ ভিত্তিক শিক্ষা কারিকুলাম। ছিল না আজকের মত নানা আনুষ্ঠানিকতা কিংবা আয়োজন। তবুও শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণের আলাদা রওনক- রওশন ছিল এখানে। বিশ্ব পরিমণ্ডলে আল-আযহার একটি আধুনিক আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পাওয়া সত্ত্বেও হাজার ধরে চলে আসা রোয়াকের ঐতিহ্যবাহী দরসের প্রাচীনধারাটি এখনও ধরে রেখেছে জামেউল আল আযহার।
রোয়াকুল আযহার পরিচিতি:
আযহার মসজিদ ভিত্তিক পরিচালিত প্রাচীন পদ্ধতির শিক্ষা কারিকুলামকে সাধারণত ‘রুয়াকুল আযহার’ বলা হয়ে থাকে।
আরবি ভাষায় রোয়াক মানে: প্রাঙ্গণ, ছাদযুক্ত করিডোর, বারান্দা বা হলরুম। আযহার মসজিদের বারান্দায় অনুষ্ঠিত এই ইলমি মজলিসগুলোকে সাধারণত ‘রোয়াকুল আযহার’ বলা হত। আযহার মসজিদে তালিবুল ইলমদের জ্ঞানার্জনের সুবিধার্থে মুসলিম শাসকগণের অর্থায়নে এই ইলমি মাজলিসগুলোর আয়োজন করা হতো। থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের মাঝে বইপত্র বিতরণ ও কৃতি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান ইত্যাদি সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সমৃদ্ধ ছিল তখনকার রোয়াকগুলো। সে সময় আযহার মসজিদে মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলের জন্য আলাদা আলাদা রোয়াকের ব্যবস্থা ছিল। মিসরীয় শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল বেশ কয়েকটি রোয়াক। যেমন, রোয়াকুল আব্বাসী, রোয়াকুল হানাফিয়াহ এবং রোয়াকুল হানাবিলাহ ইত্যাদি।
আর বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল আধুনিক হোস্টেলের সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ রোয়াকুল হুনুদ, রোয়াকুল জাওহারিয়াহ, রোয়াকুল আফগানসহ অসংখ্য রোয়াক। সে যুগে আল আযহারের ইলমি মজলিসগুলোকে পরিচয়ের সুবিধার্থে ‘অমুক রুয়াকের ক্লাস’ ইত্যাদি নামে ডাকা হত। আর সেই থেকে মিশরের প্রাচীন পাঠদান পদ্ধতিটি রোয়াকের ক্লাস নামে পরিচিত লাভ করে। বর্তমানে আযহার মসজিদের প্রাচীন রোয়াক কেন্দ্রিক ব্যাপক কর্মযজ্ঞের দেখা না মিললেও প্রাচীন পাঠদান পদ্ধতিটি এখনো আপন মহিমায় অব্যাহত রয়েছে। এবং আধুনিককালেও সেই বরকতময় প্রাচীন ধারাটির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে মিশরের সর্বোচ্চ ধর্মীয় প্রধান শাইখুল আযহার ড. আহমদ আল তায়্যিব-এর অবদান অনস্বীকার্য।
আযহার মসজিদভিত্তিক পরিচালিত বর্তমান রোয়াকর কার্যক্রমসমূহ:
ঐতিহ্যবাহী কিতাব সমূহের পাঠদান কার্যক্রম
সেই প্রাচীনকাল থেকেই আযহার মসজিদের প্রাঙ্গণ ছিল যুগশ্রেষ্ঠ আলেম-উলামা, ফকিহ-মুহাদ্দিসগণের পদচারণায় মুখরিত। এখানকার দরস-তাদরিসগুলোতে ছিল বহির্বিশ্ব থেকে আগত জ্ঞান পিপাসু তালিবে ইলমদের ব্যাপক অংশগ্রহণ। তখন শিক্ষা কারিকুলাম ও পাঠদান পদ্ধতিও ছিল প্রাচীন নিয়মে। শায়খগণ মসজিদে নিজেদের বিশেষ স্থানে বসে দরস দিতেন। আর শিক্ষর্থীরা তাদের পছন্দের শায়খের দরসে নিয়মিত উপস্থিত হতেন। পছন্দের কিতাবের পাঠ শেষে প্রতিটি শিক্ষার্থী লাভ করতেন ‘ইজাযাহ’। পরবর্তীতে যুগ চাহিদার আলোকে আল আযহারের শিক্ষাব্যবস্থায় আসে পরিবর্তন। নতুন নিয়মে শিক্ষাব্যবস্থায় নিয়ে আসা হয় জাগতিক প্রয়োজনীয় সব বিষয়বস্তু ও বিষয়ভিত্তিক উচ্চ ডিগ্রি অর্জনের আধুনিক সুবিধা। ধর্মীয় জ্ঞানের সাথে যুক্ত করা হয় চিকিৎসা, ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসা, অর্থনীতিসহ বর্তমান বিশ্বের অতীব প্রয়োজনীয় সব সাবজেক্টগুলো। এত সব আধুনিকায়ন সত্ত্বেও আল আযহার তার বরকতময় প্রাচীন ধারাটি এখনো ধরে রেখেছে সযত্নে। সেই প্রাচীন নিয়মে দরসগুলো আজও চলে আসছে হাজার বছরের প্রাচীন মসজিদ জামেউল আযহারের আঙ্গিনায়।
এখনো রোয়াকুল আযহারে প্রাচীন ধারায় নিয়মিত দরস হয়— হাদিস শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সিহাহ সিত্তাহ, ইলমুল হাদিসের মৌলিক গ্রন্থ, ফিকহ ও তাফসিরে শাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ কিতাব থেকে শুরু করে আরবি ভাষা সাহিত্যের সব নানান দিক। দরসগুলো প্রধান করেন আল-আযহারের জাঁদরেল আলেমরা। রোয়াকুল আযহারের প্রসিদ্ধ শায়খ ইমামুল হাদিস ড. আহমদ মা’বাদ আব্দুল কারীম, ড. আহমদ উমর হাশিম, ড. আবু মুসা, ড. সুবহী আবদুল ফাত্তাহ, ড. আব্বাস শুমান, ড. ইব্রাহিম হুদহুদ হাফিজাহুমুল্লাহ -এর মতো বিশ্ববিখ্যাত আলেমদের দরসে বসতে আযহার মসজিদে দেশি বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লেগে থাকে সার্বক্ষণিক। সবার জন্য উন্মুক্ত রোয়াকের দরসগুলো চলে পুরোদস্তুর প্রাচীন কারিকুলামে। এক কিতাবের দরস সমাপ্ত হলে অপর কিতাব শুরু করেন শায়খগণ। এতে যত বছরই ব্যয় হোক, সময়ের কোনো ধরাবাঁধা থাকে না। এই তো কিছুদিন পূর্বে সমাপ্ত হয়েছে ড. আহমদ মা’বাদ আব্দুল কারীম হাফি. এর ‘ফাতহুল মুগীস’ -এর দরস। যা তিনি আজ থেকে ১০ বছর পূর্বে শুরু করেছিলেন। এরপর তিনি ‘শরহে ইলালুত তিরমিজি’ কিতাবের ব্যাখ্যাদান শুরু করেছেন। রুয়াকুল আযহারে শায়খগণ যুগ যুগ ধরে এত সব বিশাল ব্যাখ্যা গ্রন্থগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য অর্পণ করে থাকেন সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে। ইলমে দীনের খেদমতের জন্য তাঁরা সর্বস্ব উজাড় করে দেন।
এই দরসগুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে সকল বয়সী মিশরীয় নারী-পুরুষরাও অংশগ্রহণ করে থাকেন। দরস চলাকালীন পুরো মাজলিস থাকে লোকে লোকারণ্য। মজলিসের কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। কেউ খসখস শব্দে পার্শ্বটীকা লিখছেন, কেউ কান খাড়া করে অপলক দৃষ্টিতে শায়খের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। যেন এক স্বর্গীয় মুহূর্ত।
কারণ, তারা জানেন দরসগুলো একবার ছুটে গেলে দ্বিতীয়বার আবার শুনার সৌভাগ্য হয়ত হয়ে উঠবে না। উল্লেখ্য দরসগুলোতে নারী শিক্ষার্থীদের জন্যে আলাদা নিরাপদ ব্যবস্থা রাখা হয়।
রোয়াকুল উলুমিশ শারিয়া ওয়াল আরাবিয়া
শাইখুল আযহার ড. আহমদ তায়্যিব হাফি.—এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে আযহার মসজিদের প্রাচীন শিক্ষাধারাটি পুনরায় চালু করা হয়েছে। শারিয়া ইসলামিয়া ও আরবি ভাষার শিক্ষাদানের লক্ষ্যে। যার শাখা-প্রশাখা আজ পুরো মিশরজুড়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে। রোয়াকগুলোতে রীতিমতো দরস প্রধান করেন মিশরের বিখ্যাত সব আলেমগণ।
এই শিক্ষা কারিকুলামের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
- ইসলামের ঐতিহ্যবাহী মধ্যমপন্থাকে অবলম্বন করে জ্ঞানার্জনে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ব্যাপক ইলম অর্জনের সুযোগ প্রদান করা।
- চরমপন্থাকে এড়িয়ে দীনের সঠিক ফিকহ জ্ঞানার্জনের ব্যবস্থা করা।
- নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে সকল মুসলিমকে অংশগ্রহণের যোগ্য করে তোলা।
- দীনি শিক্ষাব্যবস্থার যে গুরুদায়িত্ব আল-আযহার কর্তৃপক্ষ বহন করে আসছে তা যথাযথ সম্পাদন করা।
রোয়াকের শিক্ষা কারিকুলাম:
রোয়াকুল আযহার শিক্ষাকারিকুলামের পরিচালক ডক্টর আবদুল মুনঈম ফুয়াদ (হাফি.) এটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন– ইসলামি শরিয়া ও আরবি সাহিত্য কেন্দ্রিক রোয়াক শিক্ষাধারা তিনটি স্তরে বিভক্ত। তিনটি স্তর হলো:
ক. প্রাথমিক স্তর: এই স্তরে শিক্ষার্থীদেরকে নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়।
খ. মাধ্যমিক স্তর : প্রাথমিক স্তরে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাই এই মাধ্যমিক স্তরে পড়ার সুযোগ লাভ করে থাকে।
গ. ডিপ্লোমা স্তর : এই স্তরে চারটি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি প্রদান করে থাকে। যথা– ১. আকিদা ও দর্শন বিভাগ। ২.তাফসির ও হাদিস বিভাগ। ৩. ফিকহ ও উসূলুল ফিকহ বিভাগ। ৪.আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ। এই উচ্চতর বিভাগটিও ৬ মাস মেয়াদি দুইটি সেমিস্টারে বিভক্ত।
এখানকার প্রতিটি স্তরে আবার ৬ মাস মেয়াদি দুইটি করে সেমিস্টার রয়েছে।
যাদের জন্য এই রোয়াক
বয়সভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার উর্ধ্বে উঠে সকল বয়সী জ্ঞানানুরাগী নারী-পুরুষদের জ্ঞানার্জনের সুযোগ দেওয়া হয় এই রোয়াকগুলোতে। যাদের ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ হয়নি তাদের জন্য এই শিক্ষা কারিকুলামটি বেশ উপভোগ্য।
- আযহার স্কুলের একাডেমিক সার্টিফিকেটধারী কিংবা সরকারি স্কুলের সার্টিফিকেটধারী নির্বিশেষে সকলেই প্রাথমিক স্তরে আবেদন করার সুযোগ লাভ করে থাকেন।
- যারা আল-আযহার প্রিপারেটরি স্কুল বা যেকোন শরিয়া ইনস্টিটিউট থেকে সার্টিফিকেট অর্জন করেছে তারা মাধ্যমিক স্তরের ভর্তি যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
- যাদের কাছে আযহারের এইচএসসি লেভেলের সার্টিফিকেট রয়েছে তারা সরাসরি রোয়াকের ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন।
রোয়াকগুলোতে সশরীরে উপস্থিতির পাশাপাশি অনলাইনে দূর থেকেও দরসে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে ভর্তি আবেদন ও পরীক্ষায় সশরীরে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক হওয়ায় মিশেরের বাহিরে অবস্থানরত কারোর পক্ষে এই কোর্সগুলোতে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। সেই সাথে ভর্তি আবেদনকারীকে অবশ্যই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের স্বীকৃত চার মাযহাবের কোনো একটির অনুসারী হতে হবে। এটা আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও মৌলিক নীতি হিসেবে ধর্তব্য। ফিকহের প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য তার নিজ মাযহাব ভিত্তিক বইগুলোর দরস হয়ে থাকে। এবং পরীক্ষায় প্রত্যেকের নিজ মাযহাবের ফিকহগ্রন্থ থেকেই পরীক্ষা নেওয়া হয়।
আযহারের রোয়াকগুলোর জন্য পুরো মিশর জুড়ে ১৮ টি একাডেমিক কেন্দ্র রয়েছে। সবগুলো কেন্দ্রে অনলাইন ও অফলাইনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। কায়রো, আসওয়ান, লুক্সর, কেনা, সুহাজ, আসিউত, মিনিয়া, আলেকজান্দ্রিয়া, বুহাইরা, শারকিয়া, গারবিয়া, দাকাহলিয়া, মোনোফিয়া, কাফর আল-শেখ, পোর্ট সাঈদ, কালউবিয়া, দুমিয়াত ইত্যাদি জেলায় এই রোয়াকগুলোর অবস্থান। তবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি তার নির্ধারিত কেন্দ্রেই ধর্তব্য হয়ে থাকে।
আযহারের রোয়াকগুলোতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হচ্ছে শিক্ষকমণ্ডলী নির্বাচন পদ্ধতিটি। রোয়াকের নির্ধারিত পাঠ্য বইয়ের জন্য পুরো মিশর থেকে নির্দিষ্ট বিষয়ে সবচেয়ে পারদর্শী ডক্টরগণকে বাছাই করে তাঁদের মাধ্যমে দারসের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। রোয়াক ভিত্তিক শিক্ষা কারিকুলামেও পাঠ্য বই নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিথিলতার আশ্রয় নেওয়া হয়নি। বরং প্রতিটি স্তরে প্রয়োজনীয় মৌলিক কিতাবাদির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
তাখাসসুস বিভাগে যেসব বিষয়ে দরস প্রধান করা হয়:
আত-তাখাসসুস ফিল ফিকহ ওয়া উসূলিহি
- তাসাউফ ওয়াল আখলাক
- তাফসীর আয়াতিল আহকাম
- আহাদিসু আহকাম
- উসূলুল ফিকহ
- আদাবুল মুফতী ওয়াল মুস্তাফতী
- ফিকহুল মুকারিন
- কাযায়া ফিকহিয়্যাহ আল-মুআসারাহ
- ফিকহে মাযহাবী
তাখাসসুস ফিল আকিদা ওয়াল ফালসাফা
- তাওহীদ
- আল ফিরাকুল ইসলামিয়াহ
- মানতিক
- উলুমুল কুরআন
- ফিকহ
- আল মিলাল ওয়াল নিহাল
তাখাসসুস ফিল-তাফসীর ওয়াল হাদিস
- তাফসির তাহলিলী
- তাফসির মাওযুয়ী
- হাদিস তাহলিলী
- উলুমুল কুরআন
- মানাহিজুল মুফাসসিরীন
- ফিকহ
- আকিদাহ
তাখাসসুস ফিল উলূমিল আরাবিয়া
- সরফ
- নাহু
- আদব
- তাতবিকাতু ই’রাবিয়্যাহ
- তাফসির
- আকিদাহ
এছাড়াও তাখাসসুসের প্রত্যেক বিভাগে প্রথম বর্ষে পবিত্র কোরআন শরীফ থেকে নির্ধারিত নেসাবের পরিক্ষা নেওয়া হয়।
রোয়াকুল কুরআনিল কারীম
মিশর কুরআনুল কারিমের পাঠদান ও শিক্ষাগত উন্নতিতে প্রাচীন যুগ থেকেই বিখ্যাত। আর এরই ধারাবাহিকতায় সহজ পদ্ধতিতে শিশুদের কুরআন হিফজ করা ও পরিপূর্ণ মুখস্থ রাখার ভিত্তিতে রুওয়াকুল আযহার এই শিক্ষা কারিকুলামটি শুরু করেছে। এতে মিশরের শিশুদের ব্যাপক অংশগ্রহণ বেশ আশাজাগানিয়া।
শিক্ষা কারিকুলাম:
- প্রাথমিক একটি সাধারণ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
- ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে আবেদনকারী চারটি পদ্ধতির কোন একটিতে অবস্থান করবে। যথা:
১. এক বছরের সেশন
২. দুই বছরের সেশন
৩. তিন বছরের সেশন
৪. চার বছরের সেশন
এবং প্রত্যেক পদ্ধতিতেই কুরআন হিফজের পাশাপাশি তাজবীদের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়।
- অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয় এবং এতে উন্নতি পাওয়া গেলে সামনের দিকে অগ্রসর হতে দেওয়া হয়। অন্যথায় তাকে পিছন থেকে আবার পড়ে আসতে হবে। অতঃপর বার্ষিক পরীক্ষা হয় এবং উত্তীর্ণদের পাসিং সার্টিফিকেট দেওয়া হয় পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে উন্নীত হওয়ার জন্য। উল্লেখ্য এই হিফজ কার্যক্রমের জন্য প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মিশরের সেরা হাফেজদের নির্বাচন করা হয়। শিশুদের অত্যন্ত যত্নের সাথে হিফজ ও কুরআন শিক্ষাদানে রুওয়াকুল কুরআনিল কারীম পুরো মিশরে বিখ্যাত।
রোয়াকুত তাজবীদ ওয়াল কিরাআত
পবিত্র কুরআন নিয়ে গবেষণা ও কেরাত শিল্পে আযহারের জুড়ি মেলা ভার! আর এ থেকেই রোয়াকুল আযহারের পক্ষ থেকে এই বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। এখানে বিজ্ঞ কারীদের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হয়। তাজবিদের মৌলিক বিষয়াদি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও গবেষণালব্ধ তথ্য উপস্থাপন করা হয় এই শিক্ষা কারিকুলামে। সেই সাথে কিরাআতে উপর দক্ষতা নিশ্চিত করতে কেরাতের প্রায় প্রতিটি স্তরের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়ে থাকে।
শিক্ষা কারিকুলাম:
- আল-আযহার মসজিদে একটি কমিটির দ্বারা অনুষ্ঠিত পরীক্ষার মাধ্যমে রুয়াকুল আযহারের এই শাখার জন্য আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের স্তর নির্ধারিত হয়। অতঃপর তাদের উপযুক্ত স্তরে ভর্তি নেওয়া হয়।
- স্তর নির্ণয় পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী ছাত্রদের নিম্নলিখিত কার্যক্রম গুলোর মধ্যে কোন একটিতে অংশগ্রহণ করে থাকে;
- রেওয়াত ভিত্তিক একক কেরাত নিয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করা।
- আল-শাতিবিয়া এবং আদ-দুররাতুল-মাদিয়ার মতনের উসূল ব্যাখ্যা করা।
- আশ-শাতিবিয়াহ এবং আদ-দুররাতুল-মাদিয়ার মতনের, অক্ষর শিলালিপির ব্যাখ্যা করা এবং দশ-কেরাতকে একসাথে আয়ত্বের প্রশিক্ষণ।
- তাইয়্যিবাতুন নাশর ফিল কিরাআতিল আশারাতিল কুবরা কিতাবের মতনের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ।
- স্তরের শেষে শিক্ষার্থীদের জন্য চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। যারা সফল হয় তাদেরকে পাসিং সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। এবং রোয়াকুল উলুম আল-শারইয়্যাহ এর মতো বাকি দুটো রোয়াকেরও মিশরে ১৮ টি অঞ্চলে প্রায় পঞ্চাশটির মতো করে কেন্দ্র রয়েছে।
আল- আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের খেদমত আজ মিশর ছেড়ে বহির্বিশ্বের কানায় কানায় পৌছছে। আমেরিকা থেকে ইউরোপ, এশিয়া থেকে আফ্রিকা, রাশিয়াসহ প্রতিটি মহাদেশ থেকে আযহারে আসছেন তালিবুল ইলমদের কাফেলা। এর পেছনে আযহারের আন্তরিক ও চমৎকার শিক্ষা পরিকল্পনার অবদান অনস্বীকার্য। বললে অত্যূক্তি হবে না যে, আযহার সত্যিকার অর্থেই তার ‘রূপে গুণেই সেরা’।