জীবন সাজানোর তাগিদেই প্রতিনিয়ত মানুষ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নীল ভবিষ্যৎ প্রত্যাশায় প্রতিটি মানুষ সেই স্বপ্ন হৃদয়ে ধারণ ও লালন করে; মেধা-শ্রম এবং সময়ের অফুরান বিনিয়োগ করে। এরপর সেই স্বপ্নগুলো একসময় ডানা মেলে উড়তে থাকে। অন্য সবার মত আমিও শৈশব থেকে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি। স্বপ্ন দেখেছি জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন নগরী মিশরের কায়রো শহরে সফর করার। স্বপ্ন দেখেছি, পৃথিবীবিখ্যাত আলিমদের সংস্পর্শে এসে সোহবতধন্য হওয়ার। সময়ের সাথে সাথে স্বপ্নপরীরা একসময় তাদের ডানা মেলে ধরে। সেই ডানায় ভর করে একদিন সত্যি সত্যিই চলে আসি জ্ঞান-বিজ্ঞানের সেই স্বপ্নীল রাজ্যে। যেই রাজ্যের রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য। বিশ্বমানচিত্রে যে জ্ঞানরাজ্য আজও দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে; ধারণ করে আছে ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র জামিয়াতুল আযহারকে; বহন করছে প্রাচীন শিল্প-সংস্কৃতি এবং হাজার বছরের গৌরবগাঁথা ইতিহাস ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্য।
কুরআনের প্রতি প্রেম ও ভালবাসা
মিশর মানেই যে আল-আযহার— মিশরের পবিত্র ভূমিতে পদার্পণ না করলে এ সত্য অনুমান করা ছিল আমার পক্ষে দুঃসাধ্য ব্যাপার। এই প্রাচীন জ্ঞানকেন্দ্রে অধ্যয়নের সুযোগ লাভের পর যেই ব্যাপারটি জেনে খুব বিস্মিত হয়েছি তা হলো—আল-আযহার বিশ্বের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে পড়তে হলে সকল ন্যাটিভ শিক্ষার্থীকে পর্যায়ক্রমে কুরআন হিফজ করতে হয়। হিফজুল কুরআন সবগুলো ফ্যাকাল্টির প্রতিটি বর্ষে মৌলিক সাবজেক্ট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া এখানকার স্থানীয় কিংবা বিদেশী শিক্ষার্থীরা সর্বক্ষণ কুরআন চর্চায় ব্যস্ত থাকেন। এমনকি অফিস-আদালত কিংবা বাসে চলন্ত অবস্থায় অধিকাংশ মানুষই কুরআন তিলাওয়াতে মগ্ন থাকেন। এর চেয়েও বিস্ময়কর বিষয় হলো, আল-আযহারের কায়রো ক্যাম্পাসের বিশ হাজার শিক্ষকদের মধ্যে আঠারো হাজারই কুরআনের হাফেজ।
আল আযহার সম্পর্কে প্রচলিত যত ধারণা
বাংলাদেশের মত ক্ষুদ্র একটি দেশে আমার জন্ম; এ দেশ থেকে সুদূর মিশরে আসার সফর কোনোভাবেই সহজ বিষয় নয়। নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে একসময় স্বপ্নের এই প্রতিষ্ঠানে আসার সুযোগ হয়েছে। আল-আযহারে আসার সিদ্ধান্তের পর বিভিন্ন প্রশ্ন ও ধারণার মুখোমুখি হয়েছি। কিছু কিছু প্রশ্ন বিব্রতকর বলে এড়িয়ে গেছি। আবার কিছু কিছু প্রশ্নে যে আমিও বিভ্রান্ত হইনি এমন না। একটু সংশয় বা সন্দেহ মনে ঠিকই দানা বেঁধেছে। তবুও প্রবল এক বিশ্বাস ছিল, পৃথিবীর এই প্রাচীনতম ইলমি প্রতিষ্ঠানে এমন কার্যক্রম তো কখনোই হওয়ার কথা নয়। তেমনই কিছু প্রচলিত ধারণা ও এর বাস্তবতা তুলে ধরছি—
এক: আল আযহারে সালাফিজমের প্রভাব
মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক ইউনিভার্সিটিগুলোতে সালাফিজমের প্রভাবের বিষয়টি একটি স্বীকৃত বিষয়। আমাদের দেশের অনেক প্রতিভাবানই এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অধ্যয়ন করে এসে বিভিন্ন সংশয় সৃষ্টি করে চলেছেন। ইসলামের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন বিধানকে অস্বীকার করে নানাবিধ বিবাদ ও বিতর্ক সৃষ্টি করছেন প্রতিনিয়ত। এরই ফলে সমাজের আলিম ও সাধারণ মানুষরা আরবে অধ্যয়নের বিষয়ে ভীত ও সন্ত্রস্ত। নতুন কোন সংকট আবার এসে হাজির হয় কিনা এ নিয়ে দ্বিধা-সংশয়ে ভুগতে থাকেন। আল-আযহার সম্পর্কেও ঠিক এই ধারণাটিই প্রচলিত রয়েছে। অনেক সচেতন ব্যক্তিরাও এ ভুল ধারণায় নিপতিত রয়েছেন। বস্তুত আল-আযহারে সালাফিজমের প্রভাব তো দূরের কথা, স্বীকৃত ফিকহি মাযহাবের অনুসরণ ছাড়া এখানে ভর্তিরই বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। আপনি আল-আযহারে ভর্তি হতে হলে কোনো এক মাযহাব মেনেই ভর্তি হতে হবে; অন্যথায় ভর্তি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। মাহাদুল আযহার বা আল-আযহার ইনস্টিটিউটে প্রত্যেক মাযহাবের ছাত্রদেরকে আলাদা আলাদাভাবে তার মাযহাবের ফিকহ ও উসুলুল ফিকহ পাঠদান করানো হয়। এমনকি এখানকার প্রয়াত ও বর্তমান সকল গ্রান্ড ইমামও কোনো না কোনো মাযহাবের অনুসারী।
একই সাথে ধর্মীয় মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে আল-আযহার মধ্যপন্থা অবলম্বন করে থাকে; অর্থাৎ কোনো বিষয়ে বাড়াবাড়ি কিংবা ছাড়াছাড়ি না করে সঠিক পন্থায় বিধান পালনের আহবান করে থাকে আল-আযহার। সমাজের প্রচলিত মাযহাবের বিরোধিতা করে অহেতুক ফিতনা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে ঐক্যের দিকে আহ্বান করে থাকে। বিভিন্ন বিদআত ও পশ্চিমারীতির কঠোর সমালোচনা করে থাকে। তেমনিভাবে সকল মাযহাবের লোকজনের প্রতি সম্মান প্রদান করে প্রত্যেককে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ মাযহাব পালনে উদ্বুদ্ধ করে থাকে।
দুই: আল আযহারে শিয়া মতবাদের প্রতাপ ও প্রতিনিধিত্ব
এটা সত্য, সূচনালগ্নে আল-আযহারের প্রতিষ্ঠা-কার্যক্রমের সূচনা শিয়াদের হাতে হয়েছিল। কিন্তু সালাহুদ্দিন আইয়ুবির নেতৃত্বে আল-আযহারের সেই সূচনালগ্নেই শিয়াদের প্রভাব-প্রতিপত্তি পূর্ণরূপেই বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে বাস্তব সত্য হচ্ছে, আল-আযহারের মৌলিক ইতিহাসের সাথে শিয়াদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আইয়ুবি যুগের পরবর্তী সময়ে শুরু হয় নতুন এক আল-আযহার যাত্রার। যেখানে শিয়াদের পাঠদান ও পাঠ্যপুস্তক ছিল সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য। বস্তুত আহলুস সুন্নাহর হাতে সূচনা হওয়া এই আল-আযহারই পরবর্তীতে বিশ্বখ্যাত ইলমি মারকাযে পরিণত হয়। যে অর্জন ও অবদানের সাথে শিয়াদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। যুগে যুগে আল-আযহার থেকে যেসকল বিদগ্ধ আলিমরা তৈরি হয়েছেন, তারা সবাই ছিলেন আহলুস সুন্নাহর প্রকৃত অনুসারী। কাজেই সূচনালগ্নে শিয়াদের সেই সম্পৃক্ততার অভিযোগে আল-আযহারকে কোনোভাবেই শিয়াদের বলয়ভুক্ত বলার সুযোগ নেই।
জামিয়াতুল আযহারের মৌলিক চিন্তা ও দর্শনের ভিত্তি আহলুস সুন্নাহ; কোনোক্রমেই মৌলিক ভিত্তি শিয়াপ্রভাবিত চিন্তা-দর্শন নয়। ফলে আল-আযহার সবসময়ই শিয়া ও যে কোনো ভ্রান্ত মতবাদের বিপক্ষে কঠোর-নীতি অবলম্বন করেন। কোনো শিক্ষার্থীর যদি শিয়া অথবা ভিন্ন কোনো ভ্রান্ত মতবাদের সাথে যেকোনো ধরনের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয় তাৎক্ষণিক তাকে আল-আযহার থেকে বহিষ্কার করা হয়। কোনো শিয়া বা সালাফি কেউ যেন অনৈতিকভাবে ভর্তির সুযোগ নিতে না পারে সে বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। এরপরও যদি কোন সালাফি বা শিয়া প্রতিনিধি নিজেদের পরিচয় গোপন করে সেখানে পড়ে এবং পরবর্তীতে নিজেকে আযহারী বলে দাবি করে নিজস্ব মতবাদের প্রচার করে ও মানুষকে সেই দিকে আহ্বান করে, তার দায় কখনো জামিয়াতুল আযহার নেয় না, বরং সে বিপথগামী হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে।
তিন: আল-আযহারে অমুসলিম শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা
আল-আযহারকে বিতর্কিত করার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হচ্ছে, আল-আযহারের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টিতে পাশ্চাত্য-সভ্যতার ইহুদি-খ্রিষ্টান নাগরিকরা অধ্যয়ন করেন এবং সেইসঙ্গে অনেক অমুসলিম শিক্ষকও পাঠদান করেন। এক্ষেত্রে অমুসলিম শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য থাকে, মুসলিমদের বিভ্রান্ত করা ও বিপথে নিয়ে যাওয়া। মোটাদাগে এ হলো আল-আযহার সম্পর্কে অমুসলিম শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিষয়ে প্রচলিত ধারণা। কিন্তু এর বাস্তবতা আসলে কতটুকু? প্রকৃত অর্থেই কি আল-আযহারে অমুসলিমদের অংশগ্রহণের সুযোগ আছে?
বাস্তবতা হচ্ছে, এ অভিযোগের কোনো ভিত্তিই নেই। আল-আযহার একটি বৈশ্বিক ইসলাম ধর্মীয় অথরিটি। সাংবিধানিকভাবে আল-আযহার মিশরের ধর্মীয়ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও প্রভাবের অধিকারী। তাছাড়া আহলুস সুন্নাহর আকিদা ও বিশ্বাস, চিন্তা ও দর্শনের উপর ভিত্তি করেই আল-আযহারের পথচলা। ফলে আল-আযহারের ক্ষেত্রে এ অভিযোগ একেবারেই অমূলক। আল-আযহারে ভর্তির জন্য প্রধান শর্ত মুসলিম হওয়া; স্বীকৃত চার মাযহাবের কোনো একটি মাযহাবের অনুসারী হতে হবে। এর বাইরে আল-আযহারে ভর্তির কোনো সুযোগ নেই। আপনি আদৌ মুসলিম কিনা সে আইডেন্টিটি যাচাইয়ের জন্য ভর্তির পূর্বেই নানাবিধ ব্যবস্থাপনা রয়েছে। এ ব্যবস্থাপনাগুলো উত্তীর্ণ হয়েই আপনাকে আল-আযহারে ভর্তির সুযোগ অর্জন করতে হবে। সবমিলিয়ে প্রচলিত এ অভিযোগের পেছনে কোনো প্রমাণ নেই। এটা স্রেফ এমন দাবি, যা মিথ্যা ও ভ্রান্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। আজ পর্যন্ত কেউ এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পেশ করতে পারেনি। আমাদের স্বচক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে তো এই দাবি কেবল উদ্ভটই নয় বরং বেশ হাস্যকরও বটে। আল-আযহারের অধিকাংশ শিক্ষার্থী যেখানে পবিত্র কুরআনের হাফেজ সেখানে তাদের সম্পর্কে অমুসলিম বলাটা যথেষ্ট হাস্যকর। অধিকাংশ শিক্ষকই যেখানে কোরআনের হাফেজ এবং ইলমের প্রচার প্রসারে যারা নিজেকে উৎসর্গ করে দেন, তাদের ব্যাপারে এমন মন্তব্য করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা আমার জানা নেই ।
চার: আল-আযহারে ফ্রি-মিক্সিং ও সহশিক্ষা
এ অভিযোগ একটু বিব্রতকর এবং তা যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে মুসলিমজাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনকও বটে। আদৌ কি আল-আযহার সহশিক্ষায় বিশ্বাসী? ছেলে-মেয়ে মিলেমিশে অবাধে ধর্মীয় ও জাগতিক শিক্ষা অর্জন করে আল আযহারে? ছেলেমেয়েদের জন্য কি পৃথক কোনো ব্যবস্থা নেই পৃথিবীবিখ্যাত এই জামিয়ায়?
আল-আযহারে নারী-শিক্ষা
প্রথমত আল-আযহার নারীদের প্রয়োজনীয় উন্নত শিক্ষার মতাদর্শ লালন করে থাকে। নারীরাও দীন ও সমাজের প্রয়োজনে প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করুক এমনটাই চায় আল-আযহার। ফলে আল-আযহারে নারীদের শিক্ষার যথেষ্ট সুযোগ ও ব্যবস্থাপনা রয়েছে। পাশাপাশি আল-আযহার নারীদের পর্দার বিষয়ে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে। কোনো ধরনের ফ্রি-মিক্সিং বা সহশিক্ষার সুযোগ আল-আযহারে নেই। নারী-শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেই নারীদের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক ব্যবস্থাপনা রেখেছে আল-আযহার; এখানে ‘কুল্লিয়াতুল বানাত’ নামে মেয়েদের জন্য রয়েছে স্বতন্ত্র ক্যাম্পাস। তৃতীয় শ্রেণি থেকেই আল-আযহার মেয়েদের জন্য ব্যবস্থা করেছে আলাদা স্কুলের। নিরাপত্তার সাথে পড়াশোনার গুণগত মান নিশ্চিত করে ছেলেদের মত মেয়েদেরও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার যাবতীয় সকল সুব্যবস্থাপনা আল-আযহারে বিদ্যমান।
নারী-শিক্ষা বিষয়ে আল আযহারের দৃষ্টিভঙ্গি
নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তার প্রতি লক্ষ রেখে সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারীর সম্ভ্রম, সম্মান ও নারী-জীবনের সুরক্ষার বিষয়টি আল-আযহার অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে থাকে। সে কারণেই আযহার নারীদের জন্য গড়ে তুলেছে নারীবান্ধব গবেষণা মূলক বিবিধ ফ্যাকাল্টি। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে নারী সাহাবীরা যেমন নারী কেন্দ্রিক বিশেষ মাসআলাগুলো জানার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরাসরি আয়েশা রা. এর কাছে ভিড় জমাতেন। ঠিক তেমনিভাবে এ যুগেও নারীদের কুরআন সুন্নাহর গভীর জ্ঞান অর্জন ও গবেষণা অব্যাহত রাখতে এবং নারীকেন্দ্রিক মাসআলাগুলো শেখার জন্য নারীদের যেন সরাসরি কোন পুরুষ ইসলামিক স্কলারের পিছে পিছে ঘুরতে না হয় সেজন্য আল-আযহার নিশ্চিত করেছে নারীদের জন্য আলাদা আলাদা ক্যাম্পাসে নারীবান্ধব ধর্মীয় উচ্চশিক্ষা।
নারীদের জাগতিক শিক্ষা
সমাজের অধিকার বঞ্চিত মা বোনেরা ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে, আদালতে ন্যায্য মামলা দায়ের করার জন্য তাদের যেন কোন পুরুষ উকিলের দ্বারস্থ হতে না হয় সেজন্য আল-আযহার গড়ে তুলেছে নারীদের জন্য গবেষণামূলক আইন অনুষদ। চিকিৎসার প্রয়োজনে ঘরের মা, বোন স্ত্রী কিংবা মেয়েদের যেন কোন পুরুষ ডাক্তারের দ্বারস্থ হতে না হয়, আল্টাসনোগ্রাম করানোর জন্য যেন কোন পুরুষের হাতে ছেড়ে দেওয়া না লাগে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বদ্ধ অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন কিংবা সিজার করানোর জন্য মেয়েদের পেটে যেন কোন পুরুষ ডাক্তারের আঙুল চালাতে না হয়, সে জন্য আল-আযহার নারীদের জন্য গড়ে তুলেছে নারীবান্ধব গবেষণামূলক মেডিকেল বিভাগ। এসব বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, আল-আযহার নারী জীবনের সুরক্ষা এবং সমাজ ও মানবতার কল্যাণের কথা বিবেচনা করে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নারীর ধর্মীয় ও জাগতিক শিক্ষা নিশ্চিত করেছে। কুরআনুল কারীমের আয়াত — ‘আর তোমরা আপন ঘরে অবস্থান করো’ (সূরা আহযাব:৩৩)
এই আয়াতকে নারীশিক্ষার সাথে আল-আযহার সাংঘর্ষিক মনে করে না। কারণ চিকিৎসা করাতে যাওয়া এটা যেমন নারীর প্রয়োজন। ঠিক তেমনি ভাবে মানবতার কল্যাণে ধর্মীয় ও জাগতিক জ্ঞান অর্জন করাও নারীর অবশ্য প্রয়োজন। আল- আযহার ইসলামের সঠিক মূল্যবোধ, চিন্তা ও চেতনা, বিশ্বাস ও কর্ম পন্থা হাজার বছর যাবৎ শত বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে আজও যেভাবে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে আছে, তা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে। শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি আল-আযহারের রয়েছে নিজস্ব অগণিত হাসপাতাল, মিডিয়া সেন্টার, দৈনিক পত্রিকা, রেডিও চ্যানেল সহ নানাবিধ সেক্টর ও কার্যক্রম।
ইসলামের সঠিক, সুন্দর, নির্মল ও পবিত্র ভাবধারা অটুট রেখে স্বজাতির কাছে যেন নিয়ে আসতে পারি জ্ঞান ও বিজ্ঞানের অসীম ভাণ্ডার। ইসলামের চিন্তা ও চর্চা কেবলমাত্র মসজিদ ও মাদরাসার সীমিত বলয়ে না থেকে তা বিরাজ করুক দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতির প্রতিটি সেক্টরে। ইসলামের আদর্শ ও মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন রেখে আবারও শুরু হোক আধুনিক শিক্ষার এক নতুন বিপ্লব। এ থেকেই তৈরি হোক ইবনে সিনা, আল বেরুনী, মুসা খাওয়ারিজমি, জাবির ইবনে হাইয়ানের মত বিদগ্ধ ব্যক্তি।
লেখক: শিক্ষার্থী, আল-আযহার ইনস্টিটিউট, কায়রো, মিশর