আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ঐতিহাসিক প্রাচীন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়। হাজার বছর ধরে জ্ঞানবিজ্ঞানে মুসলিম বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব দিয়ে আসা এক অনন্য প্রতিষ্ঠান। বালাদুল আযহার মিশরের বুকে ফাতেমি, আইউবি, মামলুক, উসমানি, ফরাসি ও ব্রিটিশসহ নানান সাম্রাজ্যের উত্থান পতনের সাক্ষী আল আযহার আজও আপন মহিমায় টিকে আছে। এ প্রতিষ্ঠান যুগ যুগ ধরে এমন অসংখ্য-অগণিত ব্যক্তিত্ব তৈরি করে আসছে যারা একাধারে যেমন জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, তেমনিভাবে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতির প্রতিনিধি হয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বও দিয়ে যাচ্ছেন। বক্ষমাণ প্রবন্ধে আমরা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা আযহারের এমন অনেক নক্ষত্র নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো যারা যুগে যুগে উম্মাহকে আলোর দিশা দিয়েছেন।
শাইখ আহমাদ আদ-দারদির (মৃত্যু : ১৭৮৬ খ্রি.):
মিশরের আসয়ুত জেলায় ১৭১৫ খ্রিস্টাব্দে তার জন্ম। তিনি মালেকি মাযহাবের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। উসুলবিদ। তাসাউফের ‘খলওয়াতিয়্যাহ’ তরিকার ইমাম। দুনিয়া বিমুখ ও সত্য প্রকাশে ছিলেন আপোষহীন। প্রায় ত্রিশটির মত গ্রন্থ লিখেছেন। ‘শারহু মুখতাসারিল খালিল’, ‘আকরাবুল মাসালিক’, ‘নাযমুল খারিদা’ ও ‘তুহফাতুল ইখওয়ান’ এসবের অন্যতম। তার রচিত কালজয়ী ফিকহগ্রন্থগুলো মালেকি মাযহাবের মৌলিক মাসদারের মর্যাদা লাভ করেছে। ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে মিশরেই তার ইন্তেকাল হয়।
শাইখ রিফা আত-তহতবি (মৃত্যু : ১৮৭৩ খ্রি.):
১৮০১ খ্রিস্টাব্দে মিশরের তাহতা শহরে তার জন্ম। মিশর ও আরববিশ্বের সাংস্কৃতিক জাগরণের অগ্রনায়ক তিনি। দার্শনিক ও ইতিহাসবিদ ছিলেন। অনুবাদের জগতে শৈল্পিক বিল্পব সৃষ্টিকারী হিসেবে গণ্য করা হয় তাকে। ফ্রান্স থেকে ইউরোপীয় ভাষা ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের উপর বুৎপত্তি অর্জন করে ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে মিশর ফিরে আসেন এবং তাফসির, হাদিস, চিকিৎসাবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা ও অর্থনীতির বেশকিছু মৌলিক গ্রন্থ অনুবাদ করেন। এতে আরববিশ্ব ইউরোপীয় সংস্কৃতির সাথে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে উঠে। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে সরকারি নির্বাসন থেকে ফিরে এসে নতুন উদ্যোমে বিভিন্ন পত্রিকা, সংগঠন ও ইসলামি প্রকল্প নিয়ে কাজ করেন। নিহায়াতুল ইজায, মানাহিজুল আলবাব ও তালখিসুল ইবরিয তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে এপ্রিল তিনি ইন্তেকাল করেন।
শাইখ মুহাম্মাদ আবদুহু (মৃত্যু : ১৯০৫ খ্রি.):
মুহাম্মাদ আবদুহু ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে মিশরের বুহাইরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন আধুনিক যুগে ইসলামি আইনশাস্ত্রের অন্যতম সংস্কারক ও আরব নবজাগরণের নেপথ্য মহানায়ক। তুর্কি শাসনামলের শেষ দিকে মিশরে যে স্থবিরতা ছেয়ে গিয়েছিল সে সুষুপ্ত জনপদকে জাগিয়ে তুলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সচেতনতা তৈরিতে এ আযহারি শাইখের অবদান অনস্বীকার্য। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মিশরীয় জনগণ তাকে ‘ইমাম’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল। ক্ষুরধার কলমে সারাজীবন লিখে গেছেন জাগরণ ও বিপ্লবের কথা। শাসকদের রোষানলে পড়ে লেবাননে নির্বাসিত হয়েও তিনি দমে যাননি। পরবর্তীতে দেশে ফিরে আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার ও তরুণদের বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণের পথে কাজ করে গিয়েছেন। কিছু বিচ্ছিন্ন মতের কারণে কেউ কেউ তার সমালোচনাও করেছেন। ১৮৯৯ সালে তিনি মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি নির্বাচিত হন। ফলে রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ে দাওয়াত ও ইসলাহি কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। আজ অবধি মিশরে বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানে তার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তার লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৫৫ টি। তন্মোধ্যে রিসালাতুত তাওহিদ ও আল-ইসলাম ওয়া নাসরানিয়্যাহ বাইনাল ইলমি ওয়াল মাদানিয়্যাহ অধিক বিখ্যাত। ১১/৭/১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ জুলাই মিশরের আলেকজান্দ্রিয়াতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
শাইখ আহমদ শাকির আল-কারমি (মৃত্যু : ১৯২৭ খ্রি.):
ফিলিস্তিনী বংশদ্ভূত এ আযহারী সাংবাদিকের জন্ম ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে। তিনি একজন খ্যাতিমান আরবি সাহিত্যিক। সাহসী সমালোচক। বহুমাত্রিক প্রতিভাবান শিল্পী। আধুনিক কবি। অনুবাদ সাহিত্যে বিপ্লবের কারণে তাকে ‘আরব বিশ্বে অনুবাদের জনক’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। তিনি সৌদি আরব, মিশর ও ফিলিস্তিন ভিত্তিক বিভিন্ন পত্রিকা সম্পাদনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ৯ অক্টোবর সিরিয়ায় ইন্তেকাল করেন।
শাইখ আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির (মৃত্যু : ১৯৫৮ খ্রি.):
তিনি বিংশ শতাব্দীর একজন কিংবদন্তী মহাপুরুষ। একাধারে ফিকহ, তাফসির, তাওহিদ এবং আরবি সাহিত্যে পারদর্শী ছিলেন। তবে তার মূল শাস্ত্র ছিলো ইলমুল হাদিস। তাকে হাদিসের জগতে ‘শামসুল আইম্মাহ’ উপাধী দেয়া হয়েছিলো। পাণ্ডুলিপি শাস্ত্রেও তার বিশেষ অবদান রয়েছে। তার পিতা মুহাম্মাদ শাকির ছিলেন সুদানের প্রধান বিচারক ও মিশরের সাংসদ। তার ভাই মাহমুদ শাকির ছিলেন মিশরের শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ, কবি ও সাহিত্যিক। আল্লাহ জ্ঞানের অসীম খাজানা দিয়েছিলেন এ পরিবারকে। তার তাহকিককৃত শ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলোর মধ্যে আল-বায়িসুল হাসিস, আর-রিসালাহ লিশ শাফেয়ী, উমদাতুত তাফসির ও আল উমদাহ ফিল আহকাম অন্যতম। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ১৪ জুন তিনি ইন্তেকাল করেন।
ড. মুস্তফা আস-সিবায়ি (মৃত্যু : ১৯৬৪ খ্রি.):
১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার হিমসে তার জন্ম। আল-আযহারের এক কৃতি সন্তান। বহুমুখী জ্ঞানের অধিকারী সৃজনশীল ইসলামি চিন্তাবিদ। কৌশলী রাজনীতিবিদ। আল্লাহর পথের একজন সাহসী সৈনিক। প্রাচ্যবাদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক রণে যেমন ছিলেন অসাধারণ কলম সৈনিক তেমনি সামরিক ময়দানেও ছিলেন সাহসী কমান্ডার। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে মিশরে অবস্থান কালেই তিনি ব্রিটিশ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নামেন। ইরাকে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে স্বশরীরে অংশগ্রহণের ফলে কারারুদ্ধও হন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে তিনি ফিলিস্তিনের পক্ষে সিরিয়ার ইখওয়ানুল মুসলিমিন ব্যাটেলিয়নের নেতৃত্ব দেন। সিরিয়ায় আল-ইখওয়ানুল মুসলিমুনের প্রতিষ্ঠাতা তিনিই।
রাজনৈতিক ময়দানে সক্রিয় এ মনীষী ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে সিরিয়ার গণপরিষদে দামেস্ক থেকে ডেপুটি নির্বাচিত হন। কিছুদিন পর কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট, তারপর সংবিধান কমিটির মাঝে কাউন্সিলের সদস্য পদ অলংকৃত করেন। এত বৈপ্লবিক কার্যকলাপে সোচ্চার থাকা সত্তে¡ও শাইখ সিবয়ি বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনে অনন্য অবদান রেখে গেছেন। বিশেষ করে ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি রক্ষার্থে প্রাচ্যবিদদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি এক পাহাড়সম প্রতিরোধের দেয়াল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অভিজ্ঞতা সঞ্চার ও পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কারিকুলাম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে তুরস্ক, ইতালি, ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডসহ আরো অনেক দেশে ভ্রমণ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন বহু পত্রিকা ও গবেষণাগার। ড. সিবয়ির রচিত অনেক গ্রন্থ রয়েছে। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ হল, আস-সুন্নাহ ওয়া মাকানাতুহা ফিত তাশরিইল ইসলামি, আল-ইসতিশরাক ওয়াল মুসতাশরিকুন ও মিন রাওয়াইয়ি হাদারাতিনা। ৩/১০/১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে এ মহান মনীষী দুনিয়া ত্যাগ করেন।
মুহাম্মাদ ইবরাহিম (মৃত্যু : ১৯৭৮ খ্রি.):
এ আযহারি আলিম প্রসিদ্ধ আলজেরিয়ান রাজনীতিবিদ। সামরিক নেতা। স্বাধীন আলজেরিয়ার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে তাকে আফ্রিকার সবচেযে ইন্টেলেকচুয়াল রাজনীতিবিদ মনে করা হয়। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে আলজেরিয়ায় ইন্তেকাল করেন।
শাইখ মুহাম্মাদ আবু শাহবাহ (মৃত্যু : ১৯৮৩ খ্রি.):
১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই সেপ্টেম্বর মিশরে তার জন্ম। ইলমুল হাদিসের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাফসির বিশেষজ্ঞ। বহুগ্রন্থ প্রণেতা। ইসলামি আলোচক। কর্মজীবনে তিনি আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়সহ মিশর, সৌদি আরব, সুদান ও ইরাকের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৫/৭/১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ঈদের দিন তিনি এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া ত্যাগ করেন। আল-মাদখাল লিদিরাসাতিল কুরআন, দিফা আনিস সুন্নাহ, আলামুল মুহাদ্দিসিন ও আল-ইসরাইলিয়্যাত তার শ্রেষ্ঠ রচনা।
শাইখ মুহাম্মাদ তাকিউদ্দিন হিলালি (মৃত্যু : ১৯৮৭ খ্রি.):
১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে মরক্কোতে তার জন্ম। উপনিবেশবাদ বিরোধি এ সাহসী আযহারি আলিম একাধারে ছিলেন কবি, ভাষাবিদ ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি ইলম অন্বেষণের জন্য মরক্কো থেকে শুরু করে মিশর, আলজেরিয়া, ইরাক, জার্মানি ও ভারত উপমহাদেশসহ বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন। পরবর্তীতে ভারতের নদওয়াতুল উলামায় আরবি অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এছাড়াও সৌদি, ইরাক, জার্মানি, আলজেরিয়া ও মরক্কোতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপক ছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী নাৎসি শাসনকালে বার্লিন রেডিওতে তিনি আরবি প্রোগ্রাম চালু করেছিলেন। হিটলারের মুসলিম বিদ্বেষ কমার ক্ষেত্রে এটা বেশ প্রভাব রেখেছিল। ইলমের প্রসার ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই তার জীবন কেটেছে। স্বল্পকিছু বিচ্ছিন্ন মতামত বাদ দিলে তিনি ছিলেন একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে মরক্কোর কাযা শহরে তিনি ইন্তেকাল করেন। অন্যতম রচনা হল, আল-হাদিয়্যাতুল হাদিয়া, আল-ইলহাম, মিন ওয়াহয়িল আন্দালুস ও সহিহ বুখারির ইংরেজি অনুবাদ।
ড. আব্দুল্লাহ ইউসুফ আযযাম (মৃত্যু : ১৯৮৯ খ্রি.):
আব্দুল্লাহ ইউসুফ আযযাম। মুসলিম উম্মাহর কিংবদন্তি এক মহানায়ক। মুক্তিকামী সাহসী সৈনিক। শহিদুদ দাওয়াহ। খিলাফাহ পরবর্তী উম্মাহর জাগরণের অগ্রপথিক। ইখওয়ানুল মুসলিমিনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামের আদর্শিক লিডার। আফগান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক ও সামরিক নেতা। তৎকালীন সাম্রাজ্যবাদী সোভিয়েত ইউনিয়ন ও সন্ত্রাসবাদী ইসরাঈলের যমদূত। আরব-অনারব মুজাহিদদের সেতুবন্ধন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ফিলিস্তিনে তার জন্ম। আল-আযহারের শরিয়াহ ও আইন অনুষদের এ গর্বিত সন্তান তার শিক্ষা ও দাওয়াহর বড় একটি সময় কাটিয়েছেন মিশরে। ওমান, জর্ডান, সৌদি আরব ও পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশ্যবিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আফগান জিহাদে তার অবদান অনস্বীকার্য। উম্মাহর ঐক্য ও জাগরণের জন্য তিনি সারা জীবন চেষ্টা করে গেছেন। তার রচিত আফগানিস্তানে আমার দেখা আল্লাহর নিদর্শন, সিরাত থেকে শিক্ষা, ফিলিস্তিনের স্মৃতি, লাল কর্কট, তাফসীরে সূরা তাওবা ও পাশ্চাত্যে ইসলাম বিরোধি ষড়যন্ত্রসহ সবগুলো রচনাই বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহর মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বইগুলো বাংলায়ও অনুদিত হয়েছে।
আল-আযহারের গৌরব উম্মাহর এ শ্রেষ্ঠ সন্তান ২৪/১১/১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে শুক্রবার পাকিস্তানে জুমার নামাজে যাওয়ার পথে শত্রুর বোমা হামলায় শাহাদাত বরণ করেন।
শাইখ আব্দুল্লাহ বিন সিদ্দিক গুমারি (মৃত্যু : ১৯৯৩ খ্রি.):
তিনি ছিলেন একজন হাফিযুল হাদিস। ফিকহশাস্ত্রেও অগাধ জ্ঞান রাখতেন। তাসাউফের ক্ষেত্রে শাযেলি তরিকার শাইখ ছিলেন। দুনিয়া বিমুখ এ আযহারী শাইখের জন্ম ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে মরক্কোর এক বিখ্যাত পরিবারে। মরক্কোবাসী তার মায়ের উপাধী দিয়েছিলেন ‘ভাগ্যবতী জননী’। কেননা, তার স্বামী ও সাত সন্তানের সকলেই ছিলেন বিভিন্ন শাস্ত্রের পণ্ডিত। তিনি পঁচাশির উপর গ্রন্থ রচনা করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— ‘আর-রাদ্দু আলাল আলবানি’, ‘নিহায়াতুল আমাল’, ‘ইতকানুস সুনআ’ ও ‘আল-ইবতেহাজ’। এ মহান আলেম ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।
শাইখ মুহাম্মাদ আল-গাযালি (মৃত্যু : ১৯৯৬ খ্রি.):
আধুনিক ইসলামি চিন্তাবিদদের অগ্রনায়ক এ মহান মনীষীর জন্ম ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ২২শে সেপ্টেম্বরে মিশরের বুহাইরা অঞ্চলে। ছাত্রকাল থেকেই হাসান আল বান্না রহ. এর সাথে সুসম্পর্কের ভিত্তিতে তিনি আল-ইখওয়ানুল মুসলিমুনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার ক্ষুরধার লিখনী উম্মাহর জাগরণে বেশ ভূমিকা রেখেছিলো। তবে কিছু মতপার্থক্যের ফলে তিনি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ইখওয়ানুল মুসলিমিন থেকে বের হয়ে যান।
কর্মজীবনে তিনি মিশর, সৌদি আরব, আলজেরিয়া ও কাতারের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ছিলেন। ইসলাম, অর্থনীতি ও সমকালীন বিশ্বপরিস্থিতি নিয়ে তার রচিত গ্রন্থসংখ্যা পঞ্চাশেরও অধিক। তন্মোধ্যে ‘আকিদাতুল মুসলিম’, ‘ফিকহুস সিরাহ’, আরব ও মুসলিমদের পিছিয়ে পড়ার রহস্য, ইসলাম ও স্বৈরাচার ও ইসলামি অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ই মার্চ সৌদি আরবের রিয়াদে তিনি ইন্তেকাল করেন।
শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (মৃত্যু : ১৯৯৭ খ্রি.):
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে তার জন্ম। বিংশ শতাব্দীতে হাদিসশাস্ত্রের কিংবদন্তি ব্যক্তিদের অন্যতম। আরবি ভাষা ও সাহিত্যেও তার ছিলো অগাধ পাণ্ডিত্য। ভারত উপমহাদেশের ইলমি বরেণ্য ব্যক্তিদের কার্যক্রম ও অবদান বিশ্ব দরবারে তুলে ধরায় স্বচেষ্ট ছিলেন সারাজীবন। তার খ্যাতিমান অসংখ্য ছাত্র আজ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শাস্ত্রের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে সৌদি আরবের রিয়াদে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার অন্যতম রচনা হলো, রিসালাতুল মুস্তারশিদিন, সাফাহাত মিন সাবরিল উলামা, আল-ইসনাদ মিনাদ দীন। এ ছাড়া হাদিস শাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার সত্তরোর্ধ কিতাব রয়েছে।
শাইখ মুতাওয়াল্লি আশ-শারাবি (মৃত্যু : ১৯৯৮ খ্রি.):
এ মহান মুজাদ্দিদ আলিমের জন্ম ১৫/৪/১৯১১ খ্রিস্টাব্দে মিশরের দাকাহরিয়াহ শহরে। একজন সাদামাটা আলেমও কতটা প্রভাবশালী হতে পারেন তার এক বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত শাইখ মুতাওয়াল্লি আশ-শারাবি রহ.। সাদাসিধে জীবন যাপন করেও তিনি ছিলেন মিশরের বিভিন্ন বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক। মিশরের সর্বশ্রেণীর মানুষের হৃদয়ে তার বিস্ময়কর রাজত্ব ইন্তেকালের দুই যুগ পর আজও ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। মিশরি আলেমগণ তাকে বিংশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ মনে করেন। ইলমুত তাফসিরে তার অসাধারণ দক্ষতা ছিল। দলিলভিত্তিক বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি জনমনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। আজও মিশরের দোকান-পাট, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও সেমিনার হলসহ সর্বত্র তার বয়ানের রেকর্ড বাঁজতে শোনা যায়। ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই জুলাই তার ইন্তেকাল হয়।
শাইখ বুরহানুদ্দিন রাব্বানী (মৃত্যু : ২০১১ খ্রি.):
কমান্ডার বুরহানুদ্দিন রাব্বানী আল-আযহারি একজন প্রসিদ্ধ আফগান মুজাহিদ ও রাজনীতিবিদ। ১৯৯২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আফগান মুজাহিদদের বিজয় হলে তিনি আফগাস্তিানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি জমিয়তে ইসলাম আফগানিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা। ২০১১ সালে কাবুলে এক বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন।
শাইখ মুহাম্মাদ সাঈদ রমাদান আল-বুতি (মৃত্যু : ২০১৩ খ্রি.):
১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে তার জন্ম। এ শতাব্দীর প্রসিদ্ধ ইসলামি স্কলার। বিদগ্ধ আলিম। সৃজনশীল লেখক। অনলবর্ষী বক্তা। তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, আকিদা, তাসাউফ, প্রাচীন ও আধুনিক দর্শনে সুগভীর পণ্ডিত হিসেবে খ্যাত। ২০০৪ সালে তিনি দুবাই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শ্রেষ্ঠ ইসলামিক ব্যক্তিত্বের সম্মান লাভ করেছিলেন। ২০১২ সালে শ্রেষ্ঠ ৫০০ জন মুসলিম মনীষীদের তালিকায় তার অবস্থান ছিল ২৭তম। অক্সফোর্ডের উচ্চপরিষদের সদস্যসহ তিনি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থার বিভিন্ন পদের অধিকারী ছিলেন। জীবনের শেষ দিকে এসে আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিপ্লবের বিরোধিতা করায় ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন। তিনি সিরীয় জনগণকে বিপ্লব থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন— ‘এ বিপ্লব আশানুরূপ কোনো ফলাফল বয়ে আনবে না; বরং সিরিয়াকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে।’ তবে তার বিপ্লব বিরোধী অবস্থানকে অনেকে সন্ত্রাসী আসাদ বাহিনীর পক্ষাবলম্বন বলে ধরে নিয়েছেন এবং তার প্রচুর সমালোচনা করলেও বাস্তবে তিনি কখনোই রাজনৈতিক লোক ছিলেন না। বরং তার রক্তে-মাংসে মিশে ছিল পঠন-পাঠনের নেশা। তিনি ষাটোর্ধ গবেষণামূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন, তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ হল- ফিকহুস সিরাহ, কুবরাল ইকিনিয়্যাত আল-কাউনিয়্যাহ ও আল-জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ; কাইফা নাফহামুহু প্রভৃতি। ২১ শে মার্চ ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে মসজিদে দরস প্রদানরত অবস্থায় বোমা হামলায় ৪৯ জন ছাত্রসহ তিনি নিহত হন।
নিক আব্দুল আজিজ নিক মাত (মৃত্যু : ২০১৫ খ্রি.):
নিক আযহারি একজন মালেশিয়ান ধর্মীয় রাজনীতিবিদ। তিনি প্যান মালেশিয়ান ইসলামিক পার্টির হয়ে পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন। ১৯৮৬ তে কেলান্তানে স্টেইট গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে মালেশিয়ায় তার ইন্তেকাল হয়।
ড. মুস্তফা আজমি (মৃত্যু : ২০১৭ খ্রি.):
আরব-আজমে ব্যাপকভাবে সমাদৃত ও নির্ভরযোগ্য এ মনীষীর জন্ম ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের আজমগড়ে।। হিজরি দশম শতক পরবর্তী মধ্যপ্রাচ্যে যখন ইলমে হাদিসের শাস্ত্রীয়ভাবে চর্চা স্তমিত হয়ে এসেছিল তখন ভারত উপমহাদেশের কিছু কাণ্ডারি এ শাস্ত্রের মাস্তুল মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন; যাদের প্রচেষ্টায় আবার এ শাস্ত্রে ঢেউ এসেছে। মাওলানা মুস্তফা আযমী আযহারি তাদের অন্যতম। লিখেছেন যুগোপযোগী ও গবেষণাধর্মী বহুগ্রন্থ। তাহকিক করেছেন অনেক মাখতুতাত ও পাণ্ডুলিপি। সৌদি আরবের উম্মুল কুরা ও কিং সাউদ ইউনিভার্সিটিসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ছিলেন। ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে তিনি কিং ফয়সাল এওয়ার্ড পান। তার অন্যতম রচনা হলো, দিরাসাত ফিল হাদিসিন নাবাবি ওয়া তারিখু তাদওয়িনিহি, মানহাজুন নকদ ইনদাল মুহাদ্দিসিন, কুত্তাবুন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ও তারিখু তাদবিনিল কুরআন। ২০/১২/২০১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি সৌদি আরবে ইন্তেকাল করেন।
শাইখ আব্দুস সাত্তার আবু গুদ্দাহ (মৃত্যু : ২০২০ খ্রি.):
তার জন্ম ২৮/১/১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার আলেপ্পোতে। অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ইসলামি ফিকহের পণ্ডিত হিসেবে তার ব্যাপক সুনাম রয়েছে। কর্মজীবনে সৌদি আরব, সিরিয়া, কুয়েত ও মিশরে অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। আল-ফিকহুল ইসলামি ফিল আসরিল হাদিস ও দালিলুয যাকাত তার শ্রেষ্ঠ রচনা। ২৩/১০/২০২০ সালে এ মহান অর্থনীতিবিদ কানাডায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শাইখ মুহাম্মাদ আলি সাবুনি (মৃত্যু : ২০২১ খ্রি.):
শাইখ মুহাম্মাদ আলি সাবুনির জন্ম ১/১/১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে। তিনি আধুনিক যুগে মুসলিম বিশ্বের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। তাফসিরবিদ। জ্ঞান ও গুণের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল তার মধ্যে। ফিকহে ইসলামিতেও ছিল অসাধারণ পাণ্ডিত্য। আলেপ্পোতে ইসলামি সংস্কৃতি বিষয়ে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ‘সেন্টার ফর ইসলামিক রিসার্চ অ্যান্ড রিভাইভাল অফ এরাবিক অ্যান্ড ইসলামি ম্যানুস্ক্রিপ্ট’-এর গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ বিষয়ক ইলমি ইজায নিয়ে রাবেতাতুল আলামিল ইসলামির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে বর্ষসেরা শ্রেষ্ঠ ইসলামি ব্যক্তিত্ব হিসেবে আমিরাতের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘দুবাই ইন্টারন্যাশনাল হলি কুরআন অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। অনলাইন মিডিয়াতেও তার কার্যক্রম অনেক। আসাদ বাহিনীর জুলুমের বিপক্ষে বিপ্লবের আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে হক কথা বলার ক্ষেত্রে আপোষহীন ছিলেন। তাফসির শাস্ত্রে তার আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থগুলো হলো- সফওয়াতুত তাফাসীর, কাবাস মিন নুরিল কুরআনিল কারিম ও মুখতাসারু তাফসিরি ইবনি কাসির। ১৯শে মার্চ ২০২১ সালে এ মহান দায়ী তুরস্কে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন।
শাইখ ইউসুফ আল-কারদাবি (মৃত্যু : ২০২২ খ্রি.):
বর্তমান বিশ্বে সর্বাধিক আলোচিত মুসলিম স্কলারদের একজন হলেন শাইখ ইউসুফ আল-কারদাবি। ৯/৯/১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে মিশরে তার জন্ম। ইসলামি অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখায় ১৪১১ হিজরিতে তিনি ব্যাংক ফয়সাল পুরস্কার পান। এর দুবছর পরই ইসলামি শিক্ষাব্যাবস্থায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘বাদশাহ ফয়সাল পুরস্কার’ পান।
দীর্ঘদিন তিনি মুসলিম স্কলারদের ইন্টারন্যাশনাল সংগঠন ‘আল-ইত্তেহাদুল আলামি লি-উলামাইল মুসলিমিন’ এর সভাপতি ছিলেন। বিশ্বব্যাপী ইসলামি জাগরণের মাতৃসংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমিনের নেতৃত্বে ছিলেন। তবে ভিন্নমতের কারণে মিশর সরকারের রোষানলে পড়ায় কাতারে দেশান্তরিত হন।
তার রচিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ১৭০ টি। তন্মধ্যে ‘ফিকহুয যাকাত’, ‘আল-হালাল ওয়াল হারাম ফিল ইসলাম’ ও ‘আল-ইসলাম ওয়াল আলমানিয়া’ অন্যতম। গত ২৬শে সেপ্টেম্বর ২০২২ খ্রিস্টাব্দে তিনি কাতারে ইন্তেকাল করেন।
শাইখ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুহসিন তুর্কি:
৪/৮/১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে সৌদি আরবে তার জন্ম। একজন শিক্ষাবিদ ও দেশ-বিদেশের বহু শিক্ষালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি খ্যাত। এছাড়াও তিনি ‘রাবেতাতুল আলামিল ইসলামি’ এর জেনারেল সেক্রেটারি এবং সৌদি রাজকীয় আদলতের মন্ত্রিপরিষদসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ও প্রতিষ্ঠানে উপাচার্য, অধ্যাপক ও ডিন হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। যুক্ত আছেন সৌদি ভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থায়। বর্তমানে তিনি সৌদি রাজপরিবারের অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত। রচনা ও তাহকীক মিলিয়ে তার প্রায় ত্রিশোর্ধ গ্রন্থ রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, উসূলু মাযহাবিল ইমাম আহমদ, আসবাবু ইখতিলাফিল ফুকাহা ও আল ইসলাম ও হুকুকুল ইনসান।
শাইখ ইকরিমা সাঈদ সাবরি:
১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ফিলিস্তিনে জন্মগ্রহণ করেন। মসজিদুল আকসার সাবেক খতিব। জেরুজালেমের সর্বোচ্চ ইসলামিক পরিষদের চেয়ারম্যান। ফিলিস্তিনের গ্র্যান্ড মুফতি। ইসরাঈলী সন্ত্রাসবাদ বিরোধী এ মুক্তিকামী আলিম ইসলামি বুদ্ধিজীবীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে ও ফিলিস্তিনের স্বকীয়তা রক্ষার্থে একাধিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জেদ্দা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমিসহ বিভিন্ন অনলাইন-অফলাইন জ্ঞানকেন্দ্রে সক্রিয় তিনি। ইসলামি শরিয়ার গভীর জ্ঞান এবং সংগ্রামী চেতনার চমৎকার সমন্বয় ঘটেছে এ সাহসী আলেমের মধ্যে। যুবসমাজকে স্বাধীনতার প্রতি উদ্বুদ্ধ করায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হাতে অনেক নির্যাতন এবং জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। বর্তমানে বৃদ্ধ বয়সেও দীপ্তকণ্ঠে গেয়ে চলেছেন মুক্তির গান। আল্লাহ এ মহান দাঈর ছায়া উম্মাহর উপর সুদীর্ঘ করুন। তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থহলো, হাক্কুনা ফি ফিলিস্তিন, আল-ইসলাম ওয়াত তাহদিস ও আদওয়া আলা ইজাযিল কুরআন।
মামুন আব্দুল কাইউম:
মামুন আব্দুল কাইয়ুম আল-আযহারি মালদ্বীপের প্রবীণ রাজনীতিবিদ। প্রথমে তিনি মালদ্বীপের পরিবহন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
মুহাম্মাদ ফুয়াদ মাসুম কুর্দি:
প্রথমে তিনি কুর্দিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ইরাকের সপ্তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত হন।
আব্দুর রহিম ইউনুস আলি:
তিনি আফ্রিকার দেশ চাদের বিচক্ষণ ধার্মিক রাজনীতিবিদ। হিযবুল ওয়াসাত পার্টির প্রেসিডেন্ট। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে এখন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল হিসেবে কর্মরত। চাঁদের তরুণ সমাজের মধ্যে তার প্রভাব লক্ষণীয়।
হাসান আহমাদ আল-লুযী:
তিনি ইয়েমেনি রাজনীতিবিদ। কবি। গণপ্রজাতন্ত্রী ইয়েমেনের তথ্যমন্ত্রী ও সংস্কৃতিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আল আযহারের সুবিশাল আকাশে যুগে যুগে সময়ে সময়ে যে নক্ষত্ররা আলো হয়ে জ্বলেছেন তাদের কিয়দংশের বর্ণনা এখানে তুলে আনা হলো। পরিধির স্বল্পতায় এখানে সমসাময়িক গুটিকয়েক নাম মাত্র স্থান পেলো। ইবনু হাজার, ইবনু খালদুন, ইবনুল আরাবি, ইবনু দাকিকিল ঈদ ও ইবনুল হাইসামসহ বিখ্যাত সালফে সালিহিনদের বিশাল তালিকা অধরাই রয়ে গেছে। এককথায় বলতে গেলে আযহারের অসীম আকাশের অসংখ্য নক্ষত্রকে তুলা ধরা এ ক্ষুদ্র প্রবন্ধে অসম্ভব। তবে দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, পৃথিবীর এমন ভূখণ্ড হয়ত খুব কমই আছে, যে ভূমির আকাশে কোনো না কোনো তারা জ্বলে ওঠে নি।
তথ্যসূত্র:
১. আল-আযহার ফি আলফি আম, মুহাম্মাদ আব্দুল মুনয়িম খফাজি
২. আল-আযহার ফিল আরসিফিল মিশরিয়ি, ড. মুহাম্মাদ আলি হিল্লা
৩. তাখলিসুল ইবরিয ফি-তালখিসি ব্যরিয, রিফাআ আত-তাহতাবি
৪. দিওয়ানু রিফাআ আত-তাহতাবি, তহা ওয়াদি
৫. আল-আমালুল কামিলা, মুহাম্মাদ আনদুহু
৬. জামহারাতু আলামিল আযহারিশ শারিফ, উসামা আল-আযহারি
৭. আশ-শাইখুল মুহাদ্দিস আহমাদ শাকির : হায়াতুহু ওয়া মুআল্লাফাতুহু, ইসলাম ওয়েব
৮. আল-জাযিরা চ্যানেল
৯. বাওয়াবাতুল ইখওয়ানিল মুসলিমিন
১০. উইকিপিডিয়া
লেখক: শিক্ষার্থী, আরবি ভাষা অনুষদ, আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিশর।