No Result
View All Result
  • Login
  • Register
Al Azhar blog
  • প্রচ্ছদ
  • তত্ত্ব ও সমাজ
  • বই আলোচনা
  • ইতিহাস
  • ফিকহ
  • আকিদাহ
  • তুরাস
  • চিন্তাধারা
  • সাহিত্য
  • সকল ক্যাটাগরি
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • সভ্যতা সংস্কৃতি
    • শিল্পকলা
    • জীবনদর্শন
    • ব্যক্তিত্ব
    • নারী
    • ক্যারিয়ার
    • তথ্য প্রযুক্তি
    • আঙিনা
    • প্রবাস জীবন
    • এন্টারটেইনমেন্ট
আপনিও লিখুন
যারা লিখছেন
Al Azhar blog
  • প্রচ্ছদ
  • তত্ত্ব ও সমাজ
  • বই আলোচনা
  • ইতিহাস
  • ফিকহ
  • আকিদাহ
  • তুরাস
  • চিন্তাধারা
  • সাহিত্য
  • সকল ক্যাটাগরি
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • সভ্যতা সংস্কৃতি
    • শিল্পকলা
    • জীবনদর্শন
    • ব্যক্তিত্ব
    • নারী
    • ক্যারিয়ার
    • তথ্য প্রযুক্তি
    • আঙিনা
    • প্রবাস জীবন
    • এন্টারটেইনমেন্ট
No Result
View All Result
Al Azhar blog
No Result
View All Result

নিযামিয়া মাদরাসা: মুসলিম জাহানে শিক্ষাসংস্কারের রূপকার যে বিদ্যাপীঠ

মূল: ড. আলী মুহাম্মদ সাল্লাবী, অনুবাদ: নাফিস মাহমুদ

নাফিস মাহমুদ by নাফিস মাহমুদ
নভেম্বর ২, ২০২৩
0
0
নিযামিয়া মাদরাসা: মুসলিম জাহানে শিক্ষাসংস্কারের রূপকার যে বিদ্যাপীঠ

শিক্ষা যে কোনো জাতির উন্নয়নের প্রথম ও প্রধান ধাপ। শিক্ষাকে বিবেচনা করা হয় এমন এক চালিকা শক্তি হিসেবে, যা দিয়ে কোনো সমাজ ও রাষ্ট্র ভেতর ও বাইরের লুকিয়ে থাকা প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। যুগে যুগে শিক্ষাসংস্কারক মনীষীরা তাই এ খাত নিয়ে কাজ করেছেন। রাষ্ট্র ও চিন্তাবিদরা করেছেন নানা গবেষণা। একে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন অনন্য উচ্চতায়। এক্ষেত্রে শিক্ষাদান ও পাঠ পরিকল্পনায় অবলম্বন করেছেন অনেক কার্যকরী পদ্ধতি, যা দিয়ে শিক্ষাকে করা যায় আরো সহজ, আরো ফলপ্রসূ ও সুদূরপ্রসারী।

সেলজুকি শাসনামলে শিক্ষা পদ্ধতিতে এমনই এক অভিনব ধারা যুক্ত হওয়ার কথা ইতিহাসে উঠে এসেছে। যা ইসলামী বিশ্ব জুড়ে শিক্ষা প্রক্রিয়া উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলো। যে শিক্ষাধারাকে ডাকা হয় ‘মাদারিসে নিযামিয়্যা’ বলে। যুগ যুগ ধরে নিযামিয়্যা ধারার এই মাদরাসাগুলো থেকে মানুষ জ্ঞান আহরোণ করে আসছে। এ শিক্ষা ব্যবস্থাই পূর্ববর্তী আলেমদের জ্ঞানসভায় গতানুগতিক স্বেচ্ছায় বা অনিয়মিত উপস্থিতির ধারা থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতির নিয়ম চালু করে।

এ ধারা প্রবর্তনের পুরো কৃতিত্বই ছিলো সেলজুক সুলতান মালিক শাহের প্রসিদ্ধ উযির নিযামুল মুলক আত তুসির। তিনিই বাগদাদে প্রথম নিযামি ধারার মাদরাসা চালু করেন। যার ফলে তার নামের সাথে মিল রেখে এ ধারার নামকরণ করা হয়। তিনি এ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করার কিছুদিনের মধ্যেই প্রশাসনিকভাবে পুরো সেলজুক সাম্রাজ্য ও ইসলামি বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমরা এ শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে চারটি পরিচ্ছেদে আলোচনা করবো।

প্রথমত: মাদারিসে নিযামিয়ার প্রতিষ্ঠা

ইতিহাসবিদ ও আলেমদের মাঝে প্রথম ‘ইসলামি মাদরাসা’ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মতবিরোধ পাওয়া যায়। কেউ বলেন, সেটি প্রতিষ্ঠিত হয় নিযামুল মুলকের যুগে যিনি প্রথম ‘নিযামিয়া ধারা’র মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন (৪৫৯ হি:)। আবার কারো বর্ণনামতে তা আরো অনেক পূর্বেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে তথ্য যাচাই করে ও এ বিষয়ের বই-পুস্তক ঘেঁটে জানা যায় যে, দ্বিতীয় শতাব্দির শেষ ও তৃতীয় শতাব্দির শুরুর দিকে প্রথম প্রকাশ পেয়েছিল এটি। যে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা হলেন ইমাম আবু হাফস ফকীহ আল বুখারী (১৫০-২১৭ হি:)। ইতিহাসে উল্লেখ আছে, মাদরাসাটি তার জীবদ্দশায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তিনি ছিলেন বুখারা শহরে বুদ্ধিভিত্তিক আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের একজন। তার মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পর শাম ও সিরিয়ায় একই ধারার মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় প্রাণ লাভ করে। চতুর্থ হিজরীর শুরুতে ইমাম আবু হাতেম মুহাম্মদ বিন হিব্বান তামিমী আশ শাফেয়ীর (২৭০-৩৫৪ হি:) হাতে নিশাপুরে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সে যুগের মাদরাসাগুলোতে নির্দিষ্ট কোনো একটি মাযহাবের শিক্ষা দেয়া হতো। তার কারণ ছিলো, তৎকালীন খেলাফতের রাজধানী বাগদাদে একক মাযহাবের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ‘মা ওয়ারায়ূন নাহার’ (ট্রান্সক্সিয়ানা) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো।

উল্লেখ্য, বাগদাদের আগেই দামেশকে মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। বাগদাদে প্রথম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা পায় ৩৯১ হিজরিতে। আর এই মাদরাসাকে বলা হয় মাদরাসায়ে ছাদেরিয়্যাহ। যার নামকরণ করা হয় প্রতিষ্ঠাতা ছাদের বিন আব্দুল্লাহর সাথে মিল রেখে। অত:পর দামেশকে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন কারি রিশআ বিন নাযিফ। তিনি চতুর্থ শতাব্দিতে মাদরাসায়ে রিশায়িয়্যাহ প্রতিষ্ঠা করেন। যে শিক্ষার্থীরা তৎকালীন মসজিদের হালাকায় অনুষ্ঠিত দরস থেকে ইলম অন্বেষণ করতো তারা এই মাদরাসা অভিমুখী হতে থাকে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট বিষয়ের জন্য মনোনীত ছিলো। এখানকার শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সকলের জন্যই আর্থিক সাহায্য বরাদ্দ ধরা হত। সরবরাহ করা হত তাদের জন্য সকল শিক্ষা উপকরণ।

দ্বিতীয়ত: মাদারিসে নিযামিয়ার শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য

মাদারিসে নিযামিয়্যাহ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যে লক্ষ্যগুলো কার্যকর করে আসছে তা হলো,

প্রথমত: একচ্ছত্রভাবে মহান আল্লাহর ইবাদত নিশ্চিত করা। বান্দা আপন রবের ইবাদত করবে, এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে মানুষের জীবনকে সুবিন্যস্ত ও সুসংগঠিত করা। আর একচ্ছত্রভাবে রবের ইবাদতকে নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন একটি সুনিপুণ জীবনচক্রে নিজেকে আবদ্ধ করা, যা লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে। মাদারিসে নিযামিয়াহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই লক্ষ বাস্তবায়নের পরিপূর্ণ প্রয়াস পেয়েছিল।

দ্বিতীয়ত: শরীয়তের বিধানাবলি উত্তমভাবে বাস্তবায়ন ছিলো এ শিক্ষাধারার দ্বিতীয় লক্ষ। কারণ, শরীয়তের সকল বিষয় সর্বসাধারণের জন্য স্পষ্ট নয়। তাই, জনসাধারণের মধ্যে শক্তিশালী ও পরিকল্পিত ইসলামী পাঠদানের মাধ্যমে এর প্রচার ও বিস্তৃতি ঘটানো সম্ভব। মহান আল্লাহর হুকুম আহকাম ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য অনুধাবন করতে পারার মাধ্যম হলো সঠিক শিক্ষা। যেমনটি আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআল মাজীদে বলেন— ‘আমি আপনার নিকট কুরআন নাযিল করেছি সমস্ত বিষয়ের ব্যাখ্যাস্বরূপ এবং মানুষদের জন্য হেদায়েত, রহমত ও সুসংবাদ হিসেবে।’ এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়, শরীয়ত বিধিত সকল ইবাদাত শুধু আল্লাহ তায়ালার জন্য হতে হবে। যেই ইবাদাতের সাথে হিদায়াত ও রহমত সম্পৃক্ত। পূর্বের উদ্দেশ্য থেকে আরো একটি উদ্দেশ্য তৈরি হয়। আর তা হলো, এমন মানুষ গঠন করা যে নিজেকে সংশোধন করার পাশাপাশি অন্যের জন্যও হবে সংশোধনকারী। এটাকে ইসলামি শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলত: ইসলামী শিক্ষা মানুষকে এমনভাবে গঠন করে, যার মাধ্যমে সে সৎ কাজে নিজেকে প্রস্তুত করার পাশাপাশি সে অন্যকেও এ ব্যাপারে উৎসাহ ও নির্দেশনা দান করে। অসৎ কাজ থেকে নিজেকে পুরোপুরি বিরত রাখে আর অন্যকেও তার থেকে বিরত থাকার আহ্বান করে।

তৃতীয় লক্ষ ইলমী পরিবেশকে ব্যাপক করা: ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, এমন ইলমি পরিবেশ তৈরি করা যার মাধ্যমে শিক্ষক ও ছাত্ররা জ্ঞান গবেষণায় আপ্লুত হবে। কিতাব লেখার খেদমত আঞ্জাম দিতে পারবে। এভাবে জ্ঞানের চর্চার মধ্য দিয়ে প্রতিটি নব্য বিষয়কে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষা সিলেবাসে সম্পৃক্ত করতে পারবে।

চতুর্থ লক্ষ শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মক্ষেত্র প্রশস্ত করা। যাতে মাদরাসাগুলো শুধু অভিজ্ঞতা বিকাশের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং তারা কাজ করবে ছাত্রদেরকে নিত্যনতুন জ্ঞান ও দক্ষতায় বিজ্ঞ করে তুলতে। যাতে পূর্ববর্তী উম্মাহর অভিজ্ঞতার ফসলেরও বাস্তবায়ন ঘটবে। শিক্ষাবিদদের ভাষায় এটাকে বলে ‘নাক্বলুত তুরাছ’। বলা বাহুল্য, এর বাস্তবায়ন সম্ভব হবে ছাত্ররা যখন উম্মাহর সংস্কৃতি আর বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়গুলো সম্পর্কে পূর্ণ অবগত হবে। তাদের এই অভিজ্ঞতা বুদ্ধিভিত্তিক কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারণে সহায়ক হবে।

পঞ্চম লক্ষ: শাস্ত্রভিত্তিক যোগ্য করে গড়ে তোলা: শিক্ষার পাশাপাশি মাদরাসার আরো একটি উদ্দেশ্য হলো, ছাত্রদেরকে বিভিন্ন শাস্ত্রে এমনভাবে যোগ্য করে তোলা যার মাধ্যমে তারা কর্মক্ষেত্রের সাথে সামঞ্জস্যশীল হয়। চাই তা রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ হোক বা অন্য কিছু। বিশেষত: বর্তমানে কর্মক্ষেত্র ব্যাপকতা পেয়েছে। ফলে লক্ষ্য বাস্তবায়নে মাদরাসাগুলো যেন ছাত্রদের এমনভাবে যোগ্য করে বের করে, যাতে তারা এই সকল কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়।

আরও পড়ুন

ইতিহাসের জন্মভূমি: মিসরে ইসলামের সোনালী অতীত

ইতিহাসের জন্মভূমি: মিসরে ইসলামের সোনালী অতীত

নভেম্বর ১০, ২০২৩
‘রিহলা ফিল ইলম’:  জ্ঞানের জন্য দুনিয়াজুড়ে উম্মাহর পদচারণা

‘রিহলা ফিল ইলম’: জ্ঞানের জন্য দুনিয়াজুড়ে উম্মাহর পদচারণা

নভেম্বর ২, ২০২৩
ইসলামি সভ্যতায় চিকিৎসাবিদ্যা: চিকিৎসা ও ওয়াকফ অর্থনীতি

ইসলামি সভ্যতায় চিকিৎসাবিদ্যা: চিকিৎসা ও ওয়াকফ অর্থনীতি

নভেম্বর ২, ২০২৩

ইসলামি মাদরাসাসমূহের এই উদ্দেশ্যগুলোকে সামনে রেখেই মাদারিসে নিযামিয়া গঠন করা হয়েছে। সেই সাথে তাদের আরো কিছু উদ্দেশ্য ছিলো। যেমন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদার প্রচার ও প্রসার করা। শিক্ষার্থীরা যাতে সমকালে মাথাচাড়া দেওয়া বিভিন্ন চিন্তাভিত্তিক বাতিল মতবাদের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে পারে এবং তাদের বাতিল মতবাদ সক্রিয় হওয়া থেকে বাধা দিতে পারে। সেই সাথে শিক্ষকদের এমন একটি জামাত গঠন করা যারা সুন্নাহ ভিত্তিক মাযহাবের শিক্ষা দিবে এবং বিভিন্ন ভাবে তা ছড়িয়ে দিতে পারবে।

ষষ্ঠ লক্ষ, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের একটি চাকরীজিবী দল গঠন করা। যারা বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক কাজসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও অফিসিয়াল কাজে শরীক হবে।

তৃতীয়ত: লক্ষ্য বাস্তবায়নে যাবতীয় উপকরণ সরবরাহ ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান

নিযামুল মুলক মাদারিসে নিযামিয়্যার লক্ষ্য বাস্তবায়নে উপকরণ সরবরাহের অনেক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ভৌগোলিকভাবে এমন জায়গাকে নির্বাচন করেছেন যেটা ছিলো সকলের জন্য ফলপ্রসূ। তিনি মাদরাসায় যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন। সেইসাথে মাদরাসার শিক্ষা সিলেবাস গঠনেও প্রচণ্ড মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। মাদরাসায় পড়াশোনার নানা উপকরণ সরবরাহে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন। এসব কারণে, মাদরাসাগুলে উদার বুদ্ধিভিত্তিক কাজের প্রশস্ত উন্মুক্ত ময়দান হিসেবে তৈরি হয়েছিল।

ভৌগলিক অবস্থান নির্ধারণে প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা:

মাদারিসে নিযামিয়্যার অবস্থানের কথা উল্লেখ করে ইমাম সুবকি রহ: বলেন, নিযামুল মুলক যে সকল স্থানে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন সেগুলো হলো: বাগদাদ, বলখ, নিশাপুর, হিরাত, ইসফাহান, বসরা, বামরু, তাবারিস্তান ও মসুল। তিনি এ অঞ্চলগুলোতে একটি করে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদরাসাগুলোই হলো প্রাচ্যে প্রতিষ্ঠিত নিযামিয়্যা ধারার মাদরাসাগুলোর প্রাণকেন্দ্র। এসব প্রতিষ্ঠানের ভৌগোলিক অবস্থান থেকে প্রতীয়মান হয়, এ মাদরাসাগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো নেতৃত্ব দানের কেন্দ্রস্থল ও বুদ্ধিবৃত্তিক দিকনির্দেশনার ‘পাওয়ার ব্যাংক’ হিসেবে। বাগদাদ ও আসফাহান ছিলো এমনই দুটি থিংক ট্যাংক বা ‘মাকতাবাতুল ফিকর’। এই অঞ্চলগুলো ছিলো তৎকালীন আব্বাসি খেলাফতের রাজধানীর জন্য অধিক উপযোগী। এখানে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের যোগ্য চিন্তাবিদদের বিশাল সংখ্যাও কেন্দ্রিভূত ছিলেন। সেসবের কিছু ছিলো তৎকালীন শিয়া অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র। যেমন, বসরাহ, নিশাপুর, তাবারিস্তান, খুজেস্তান ও ইউফ্রেটিস। এই জায়গুলোতে মাদরাসা প্রতিষ্ঠাই প্রমাণ করে যে, তার এই ভৌগোলিক বণ্টন উদ্দেশ্যহীন নয়। বরং এর পিছনে ছিলো মহৎ লক্ষ্য। আর তা হলো, এ অঞ্চলগুলোতে ভ্রান্ত শিয়া মতবাদের মোকাবেলায় ছাত্রদেরকে যোগ্য করে গড়ে তোলা। আর আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারীদের পথ সুগম করা।

শিক্ষক ও আলেম নির্বাচন:

একদিকে যেমন নিযামুল মুলক মাদারিসে নিযামিয়ার জন্য ভৌগোলিক অবস্থান নির্বাচনে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন অন্যদিকে মাদরাসার শিক্ষক নিয়োগেও তিনি পূর্ণ বিচক্ষণতার স্বাক্ষর রেখেছেন। এমন আলেমদেরকে তিনি নিয়োগ করতেন, যারা সকলেই ছিলেন সে যুগের শরীয়াহর সকল বিষয়ে যোগ্য পণ্ডিত। ইমাদ আল আসফাহানী নিযামুল মুলকের এমন বিচক্ষণতার প্রশংসা করে বলেন, ‘নিযামুল মুলকের ফটক ছিলো পুণ্যবানদের সমাবেশস্থল, আলেমদের আশ্রয়স্থল।’

সত্যিকার অর্থে তিনি ছিলেন বিচক্ষণ ব্যাক্তি। আশপাশের সকলের অবস্থা সম্পর্কেই তার ছিলো অবগতি। যাকে তিনি নেতৃত্বের যোগ্য মনে করতেন তাকে তার দায়িত্বভার দিতেন। যার ব্যাপারে মনে করতেন যে, তার ইলম থেকে মানুষ উপকৃত হতে পারবে তাকে জ্ঞান বিতরণের কাজে সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধার সাথে নিয়োগ দিতেন। যাতে তিনি একাগ্রচিত্তে সাধারণ মানুষকে ইলম শিক্ষা দিতে পারেন। কখনো কখনো আলেমদের এই জামাতকে জ্ঞানের পরিবেশ থেকে দূরে কোন বিরান ভূমিতে প্রেরণ করতেন। যাতে সেখানে জ্ঞান ও ন্যায়ের চাষাবাদ করে হককে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, বাতিলকে করা যায় বিলুপ্ত।

শিক্ষা সিলেবাস প্রণয়ন:

যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি তিনি এই মাদরাসাগুলো পরিচালনার জন্য শিক্ষা সিলেবাস প্রণয়ন করেন। বাগদাদের নিযামিয়া মাদরাসার নথিপত্রে তার প্রণীত সিলেবাস স্পষ্ট ফুটে ওঠে। মূল ও শাখার সকল অংশই শাফেয়ি মাযহাবের আসহাবদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ‘মাহাসিনু আসফাহান’ গ্রন্থের লেখক উস্তাদ সাঈদ নাফিসি বর্ণনা করেন, ‘নিযামুল মুলক আসফাহান ইউনিভার্সিটির পাশে শাফেয়ী মাযহাবের ফুকাহাদের একটি মাদরাসা নির্মাণের নির্দেশ দেন। সেখানে তারা এমন এক মাদরাসা নির্মাণ করেন যা ছিলো দেখতে চমৎকার, নির্মাণে দৃষ্টিনন্দন, কর্মতৎপরতায় অতুলনীয় আর স্থানের বিবেচনায় সর্বোৎকৃষ্ট।’

মাদারিসে নিযামিয়্যা মৌলিকভাবে দুটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে। প্রথমত ফিকহের দিক দিয়ে শাফেয়ি মাযহাব। দ্বিতীয়ত আকিদার দিক দিয়ে আশআরি মাযহাব। এছাড়াও সেখানে হাদীস, নাহু, সরফ লুগাহ, আদব ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

আর্থিক বরাদ্দ ব্যাপককরণ:

নিযামুল মুলক প্রয়োজনে আর্থিক খরচে কৃপণতা করতেন না। মাদরাসাগুলো যাতে স্বকীয়তা নিয়ে উত্তমভাবে পরিচালিত হয়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখতেন। বদান্যের সাথে খরচ করতেন এবং এর জন্য ব্যাপক অর্থ বরাদ্দ রাখতেন। এ ব্যাপারে ইমাম ইবনুল জাওযি রহ. এর কথাটা উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন— ‘নিযামুল মুলক মাদরাসার জন্য সর্বস্ব ব্যয় করেছেন। মাদরাসার কাছেই একটি বাজার নির্মাণ করেছিলেন তিনি। বাজার থেকে মাদরাসার সকল শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য একটি অংশ নির্ধারণ করেন। প্রত্যেক ফিকহে আগ্রহী ছাত্রদের জন্য প্রাত্যহিক চার রিতেল রুটি বরাদ্দ করেন। আর আসফাহানের মাদরাসার জন্য বরাদ্দ করেন দশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা। নিশাপুরের মাদরাসার জন্যও প্রচুর সম্পদ বরাদ্দ ছিলো।’

নিযামুল মুলক এই সকল মাদরাসার ছাত্রদের আবাসনের জন্যও উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, যা বিভিন্ন ঐতিহাসিক বর্ণনায় উঠে এসেছে। প্রতিটি ছাত্রের জন্যই আলাদা রুম ছিলো। ইয়াকুব খাত্তাত (মৃত্যু: ৫৪৭হি:) নামে নিযামিয়্যা মাদরাসার এক ছাত্র এমনটি বর্ণনা করেছেন। তার জন্য মাদ্রাসায় আলাদা একটি রুম ছিলো। যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সিলগালা করে দেয়া হয়।

চতুর্থ: ইসলামী বিশ্বে মাদারিসে নিযামিয়্যার প্রভাব

আল্লাহ নিযামুল মুলককে রাজনীতির পাশাপাশি ইলম ও দীনের ক্ষেত্রে এমন সব কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন যার উপমা ইতিহাসে বিরল। তার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাগুলো দীর্ঘদিন চালু ছিলো। বিশেষ করে বাগদাদের নিযামিয়া ধারার মাদরাসা চার শতাব্দি পর্যন্ত চালু ছিলো। জানা যায়, এ মাদরাসায় সর্বশেষ দরস দিয়েছিলেন ‘কামুস’ গ্রন্থ প্রণেতা ফাইরুজাবাদি (মৃৃ: ৮১৭ হি:)। এ মাদরাসা অষ্টম শতাব্দির শেষ দিকে বন্ধ হয়। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিযামিয়্যা মাদরাসা থেকে নিয়োগ দেয়া হত। বিচার বিভাগ, হিসাব বিভাগ, ফতুয়া বিভাগ তার অন্যতম। এই পদগুলো ছিলো সে যুগের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিযামিয়্যা মাদরাসায় পড়ুয়া আলেমগণ ইসলামি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তারা মিশরের অভ্যন্তরে ও উত্তর আফ্রিকায় পৌঁছে যায়। সেখানকার অধিবাসীরাও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতকে সমর্থন করে। নিযামুল মুলকের মাদরাসা থেকে এমন এক প্রজন্ম স্নাতক করেছে যাদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে সুদূরপ্রসারী বহু দীনি লক্ষ ও পরিকল্পনা। ফলে আমরা দেখতে পাই এ প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতকপ্রাপ্ত অনেক আলেম শাফেয়ী মাযহাবের ফিক্বহ চর্চায়, হাদিসের পাঠদানে এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা প্রচারে দেশ-দেশান্তর সফর করেছেন। আবার দেখা যায়, তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে বিচার বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছেন। অথবা সরকারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন।

ইমাম সুবকী নিযামিয়্যা মাদরাসার প্রথম শিক্ষক আবু ইসহাক সিরাজী থেকে বর্ণনা করেন— আমি খোরাসানে সফর করেছি। সফর পথে আমি এমন কোন দেশ বা অঞ্চল অতিক্রম করিনি যার বিচারক, মুফতি অথবা খতিব আমার ছাত্র কিংবা সাথী নয়।’

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা প্রতিষ্ঠায় এ প্রতিষ্ঠান বড় ভূমিকা রেখেছে। তার অন্যতম হলো তারা শিয়া চিন্তাধারাকে সমূলে উৎপাটন করে দিয়েছেন। বিশেষকরে যখন তারা তাদের বাতিল মতবাদের বিরুদ্ধে সারগর্ভ পুস্তকাদি লিখেছেন। এই সকল চিন্তাবিদদের শিরোমণি হলেন ইমাম গাজালি রহ.। যিনি শিয়ায়ে ইসমাঈলিয়া বাতেনিয়ার বিরুদ্ধে একপ্রকার যুদ্ধই করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে তিনি বেশ কিছু কিতাব লিখেছেন। যার মধ্যে ‘ফাযাইহুল বাতেনিয়্যা’ বেশি প্রশিদ্ধ। যেটা লেখার দায়িত্ব তিনি ৪৮৭ হিজরীতে খলীফা মুসতাযহিরের পক্ষ থেকে পান।

মাদারিসে নিযামিয়্যা ইমাম শাফেয়ির মাযহাব প্রচারে সফল হয় এবং তা শক্তিশালী করে। নতুন ভূখণ্ডে তার অনুসারী তৈরী হয়। ইরাক ও ইসলামি প্রাচ্য কেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর নতুন পথ উন্মোচিত হয়। নিযামিয়্যা ধারার মাদরাসা প্রতিষ্ঠা সে যুগের বড় চাহিদা হয়ে দাঁড়ায়। গর্বের বিষয়ে পরিণত হয়। এমনকি মাদারিসে নিযামিয়্যা প্রতিষ্ঠার পর তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুসরণীয় হয়ে যায়। দীর্ঘ যুগ যাবৎ নিযামিয়্যা ধারা তার ঐতিহ্য, ছাত্র ও উস্তাদদের শৌর্যবীর্য নিয়ে শির উচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। এক পর্যায়ে সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গী আর সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ূবী রহ. মিলে এ ধারাকে আরো সহজ করে উপস্থাপন করেন। যাতে নিযামিয়্যা ধারার যাত্রার লক্ষ্য আরো পূর্ণতা পায় এবং মানুষকে সঠিক ইসলামের পথে পরিচালিত করে। বিশেষ করে ঐ সমস্ত অঞ্চল, যেখানে শিয়ারা শক্তিশালী আকার ধারণ করেছে। উদাহরণসরূপ শাম, মিশর ও ইত্যাদি ভূখণ্ড।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলো সে যুগে মানবিক জ্ঞানকে সঠিক পথে পরিচালিত করার সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম। আর নিযামিয়া শিক্ষাধারা ছিলো এর প্রচার, ব্যাপকতা প্রদান এবং লক্ষ্য বাস্তবায়নে সবচেয়ে উত্তম সহায়ক। এ শিক্ষাধারার ছক নিযামুল মুলক এঁকেছিলেন কুরআন-সুন্নাহর আলোকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা ও ইসলামি উম্মাহর আদর্শ বাস্তবায়নে।

ShareSendShareSend
নাফিস মাহমুদ

নাফিস মাহমুদ

Next Post
আধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শন সংবলিত তাফসির: রিসালায়ে নূর

আধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শন সংবলিত তাফসির: রিসালায়ে নূর

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বাধিক পঠিত

  • সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহের কবিতা— আমি চাই না

    সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহের কবিতা— আমি চাই না

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • সহশিক্ষা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ: আল আযহার নিয়ে প্রচলিত মিথ ও বাস্তবতা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • ইতিহাসের জন্মভূমি: মিসরে ইসলামের সোনালী অতীত

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

সাম্প্রতিক রচনা

জায়নবাদী আগ্রাসন:  সুলতান আবদুল হামিদ যেভাবে রক্ষা করেছিলেন আল কুদসকে 

জায়নবাদী আগ্রাসন: সুলতান আবদুল হামিদ যেভাবে রক্ষা করেছিলেন আল কুদসকে 

নভেম্বর ২১, ২০২৩
কুরআনের দার্শনিক প্রকল্প ও আধুনিক চিন্তাবৃত্তি

কুরআনের দার্শনিক প্রকল্প ও আধুনিক চিন্তাবৃত্তি

নভেম্বর ২১, ২০২৩
রোয়াকুল আযহার: সোনালী যুগের মসজিদভিত্তিক দরসগাহ

রোয়াকুল আযহার: সোনালী যুগের মসজিদভিত্তিক দরসগাহ

নভেম্বর ২১, ২০২৩
ইতিহাসের জন্মভূমি: মিসরে ইসলামের সোনালী অতীত

ইতিহাসের জন্মভূমি: মিসরে ইসলামের সোনালী অতীত

নভেম্বর ১০, ২০২৩
ADVERTISEMENT

Search

No Result
View All Result

বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন

  • আল আযহার ব্লগ সম্পর্কে
  • আল আযহার ব্লগ পরিবার
  • আপনিও লিখুন
  • বিজ্ঞাপন ও যোগাযোগ

সম্পাদনা পরিষদ

সম্পাদক: সাজ্জাদ আকবর
সম্পাদনা সহকারী : ইরফান উদ্দীন

যোগাযোগ

শারেউল ইয়ামানী, খালিদ বিন ওয়ালিদ স্ট্রীট, তাব্বা, মাদীনাতু নাসর, কায়রো।

ফোন: +201554883928
ইমেইল : awsbe.org@gmail.com

© 2023 All rights reserved by AWSBE- Azhar Welfare Society Bangladesh, Egypt. Idea & design planned by Sajjad Akbar. Developed by GM RABBANY.

আপনিও লিখুন
  • প্রচ্ছদ
  • বিশেষ লেখা
  • যারা লিখছেন
  • সমসাময়িক
  • হৃদয়ে আল কুদস
  • তত্ত্ব ও সমাজ
  • বই আলোচনা
  • ইতিহাস
  • ফিকহ
  • আকিদাহ
  • তুরাস
  • চিন্তাধারা
  • সাহিত্য
  • প্রাচ্যবাদ – পাশ্চাত্যবাদ
  • আল আযহার
  • সকল ক্যাটাগরি
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • সভ্যতা সংস্কৃতি
    • শিল্পকলা
    • জীবনদর্শন
    • ব্যক্তিত্ব
    • নারী
    • ক্যারিয়ার
    • তথ্য প্রযুক্তি
    • আঙিনা
    • প্রবাস জীবন
    • এন্টারটেইনমেন্ট
    • বিবিধ
      • ফিচার
  • Login
  • Sign Up
No Result
View All Result

© 2023 All rights reserved by AWSBE- Azhar Welfare Society Bangladesh, Egypt. Idea & design planned by Sajjad Akbar. Developed by GM RABBANY.

Welcome Back!

OR

Login to your account below

Forgotten Password? Sign Up

Create New Account!

OR

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In